বর্তমান সময়ে, হাজার হাজার মানুষের প্রশ্ন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে ? তবে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর সহজে দেওয়া সম্ভব হয় না।
কারণ ভোটার আইডি কার্ডে অনেক তথ্য থাকে এবং প্রতিটি তথ্য সংশোধনের জন্য আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়।
ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করার জন্য যে, ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় ঠিকানা সংশোধনের জন্য সেই ডকুমেন্ট গুলো কিন্তু কাজে লাগে।
সেভাবে ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ, সার্টিফিকেট সহ আরো বিভিন্ন ডকুমেন্টের দরকার হয়।
কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড থেকে ছবি পরিবর্তন করার জন্য এই কাগজপত্র গুলো কোন কাজে আসে না।
তাই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে এই প্রশ্ন এক কথায় উত্তর হচ্ছে। আপনার আইডি কার্ডের যে, সকল তথ্য ভুল আছে।
তার পরিবর্তে সঠিক তথ্য যা হবে। তার স্বপক্ষে ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
আর তার জন্য যাদের প্রশ্ন হয়ে থাকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে ? আমি তাদেরকে এখানে যে সকল ভোটার আইডি কার্ডে ভুল রয়েছে।
সেই সকল ভুলের সংশোধন আবেদন করতে চাইলে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে। সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব।
তাই আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান? তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে ?
আপনাদের জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে বিভিন্ন ভুলের ধরন অনুযায়ী। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
যার যে ধরনের ভুল রয়েছে। সে অনুযায়ী কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
তো চলুন এখন জেনে নেয়া যাক ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে? যেমন-
ভোটার আইডি কার্ডে নাম সংশোধন
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে যদি নিজের নাম এর বানান ভুল থাকে। যেমন- সালমান শাহ এর পরিবর্তে সালমান মিয়া চলে আসে।
তাহলে আপনাকে ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে যে কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
সেগুলো হচ্ছে-
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেটের কপি
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
উক্ত কাগজপত্র গুলো জমা দেওয়ার পরে অফিস কর্তৃপক্ষ আপনার ভোটার নিবন্ধন ফর্মে উল্লেখিত নাম এবং প্রদত্ত স্বাক্ষর পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
এ ধরনের আবেদনগুলো সাধারণত (ক) ক্যাটাগরিতে থাকে। এবং উপজেলা পর্যায়ে থেকে সংশোধন করা হয়।
আপনি যদি নিজের মোর নাম ঠিক রেখে শুধু পদবী পরিবর্তন করতে আগ্রহী থাকেন যেমন- সালমান থেকে সালমান শাহ। তবে আবেদনের সাথে নিম্নত্ব কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে। যেমন-
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেটের কপি
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
খুব তো কাগজগুলো জমা দেয়ার পরে, নির্বাচন অফিস কর্তৃপক্ষ আপনার ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন ফরম উল্লেখিত পদবির চেক করে দেখবেন।
এবং প্রয়োজনে আপনার সম্পর্কে তদন্ত করতে পারেন এ ধরনের আবেদনগুলো সাধারণত ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। এবং উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংশোধন করা হয়।
এছাড়া আপনার বাংলা নাম ঠিক থাকে এবং ইংরেজি নামে। আবার ইংরেজি নাম সঠিক আছে কিন্তু বাংলা নামে ভুল রয়েছে যেমন বাংলাতে নাম আছে। যেমন- সালমান হোসেন তবে ইংরেজিতে নাম আছে MD. Salman Sha তবে আবেদনের সাথে নিম্নত্ব কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেটের কপি
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
এ সকল ভুলের ক্ষেত্রে সার্ভার থেকে ২ নং ভোটা নিবন্ধন ফরম চেক করে দেখা যায়। যদি আপনার চাহিত নাম এবং ভুটানের নেমন্তন ফর্মে থাকা নামে মিল পাওয়া যায়।
তবে খুব সহজে আবেদন অনুমোদন পাওয়া যায়। এ ধরনের আবেদন গুলো সাধারণত (ক) ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। এবং উপজেলা পর্যায়ে থেকে সংশোধিত হয়।
আর আপনার ভোটার আইডি কার্ডে যে, নামটি দেওয়া হয়েছে সেটা যদি আপনার না হয়ে থাকে। একেবারে পরিবর্তন করতে চান? সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় যে কাগজপত্র গুলো লাগবে সেগুলো হচ্ছে।
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- আগের করা জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেটের কপি
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত হলফ নামা।
আপনাদের ভোটার আইডি কার্ডের সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন এর আবেদন গুলোতে, যত বেশি সম্ভব প্রমাণাদি জমা দেওয়া প্রয়োজন।
এই কাগজপত্র গুলো জমা দেওয়ার পরে ভোটার নিবন্ধন ফরম এবং ফর্মে উল্লেখিত স্বাক্ষর যাচাই করা হয়। এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
যদি সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের আবেদনে পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দেন। তবে সে আবেদন (গ) ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আর যদি কোন জমা না দেওয়া হয় তাহলে যথাযথ কাগজপত্র জমা না দিতে পারেন। তবে সে আবেদন (ঘ) ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
ভোটার আইডি কার্ডে পিতা ও মাতার নাম সংশোধন
আপনার যদি ভোটার আইডি কার্ডে পিতা এবং মাতার নাম ঠিক রেখে শুধুমাত্র নামের পদবী পরিবর্তন করতে চান। যেমন- মোঃ সালাম উদ্দিন থেকে মোঃ সালাম মিয়া হবে তাহলে আপনার সাথে নিম্নুক্ত কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পিতা এবং মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- সকল ভাই বোনের জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেটের কপি
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
আপনাদের জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে যদি এ ধরনের সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। তাহলে সাধারণত ককাটাগরিতে হয়ে থাকে। এবং এটি উপজেলা পর্যায়ে থেকে সংশোধন করা সম্ভব হয়।
এছাড়া আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে পিতা এবং মাতার মূল নাম ঠিক রেখে শুধু বানান ভুল থাকে। যেমন- আলমাস আলি এর জায়গায় আলমাছ আলী দিতে হয় তাহলে আবেদনের সাথে যে কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে। যেমন-
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পিতা এবং মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি
- সকল ভাই বোনের জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে, যদি জন্ম তারিখ ভুল হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনাদের যে, কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হবে। সে গুলোর নিম্নরূপঃ
- আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
- পিতা এবং মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের কপি
- পাসপোর্ট কপি যদি থাকে
- সকল ভাই বোনের এনআইডি নম্বর উল্লেখিত পিতার উত্তরাধিকার/ওয়ারেশ সনদ।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
- কাবিননামা সনদের কপি
- স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
- সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের রিপোর্ট
- সার্ভিস বইয়ের কপি
- চাকরির আইডি কার্ডের কপি
- অফিস স্মারকে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের প্রত্যয়নপত্র
- পেনশন/অবসর বইয়ের কপি
- মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সনদ এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভাতাদি প্রাপ্তির প্রমাণপত্র।
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র গুলোর মধ্যে যে, কাগজপত্র আপনার কাছে রয়েছে। সেগুলো আবেদনের সঙ্গে সাবমিট করতে হবে।
- ভোটার তালিকা দেখার উপায়
- ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
- যারা নতুন ভোটার স্মার্ট কার্ড পাননি তাদের জন্য পরামর্শ
একদিন থেকে তিন বছর পর্যন্ত জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদন ক ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। যাদের জন্ম তারিখ তিন বছর থেকে 5 বছর গভমেন্ট রয়েছে। তারা আবেদন গুলো ক্যাটাগরিতে করতে পারবেন।
এছাড়া যাদের জন্ম তারিখ 5 থেকে 10 বছরের গভমেন্ট রয়েছে। সেক্ষেত্রে আবেদনগুলো ক্যাটাগরিতে করতে হবে। এবং যাদের জন্ম তারিখে ১০ বছর এর বেশি সমস্যা রয়েছে সে গুলো (ঘ) ক্যাটাগরিতে পড়ে যাবে।
ভোটার আইডি কার্ডে লিঙ্গ সংশোধন
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে উল্লেখিত লিঙ্গ যদি কোনো কারণে ভুল চলে আসে।
যেমন- পুরুষের ক্ষেত্রে মহিলা চলে আসে। মহিলার ক্ষেত্রে পুরুষ চলে আসে। সেক্ষেত্রে যে কাগজপত্র গুলো সংশোধন আবেদনের সাথে সাবমিট করতে হবে। যেমন-
- ২নং ওটা নিবন্ধন ফরমের কপি
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদত্য লিঙ্গ পরিবর্তন এর প্রত্যয়ন পত্র।
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য লিঙ্গের ভুল সংশোধনের আবেদন সচরাচর (ক) ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। আর আপনাকে উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো সাবমিট করলেই। লিঙ্গ পরিবর্তন করে দেয়া হবে।
ভোটার আইডি কার্ডে র*ক্তের গ্রুপ সংশোধন
আপনার ভোটার আইডি কার্ডে যদি র*ক্তের গ্রুপে কোন প্রকার ভুল থাকে। এবং সংযোজন করার প্রয়োজন হয়। তাহলে আপনার যে, কাগজ পত্র গুলো লাগবে। সেগুলো হচ্ছে-
- মেডিকেল/হাসপাতাল থেকে র*ক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট।
শেষ কথাঃ
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে ভোটার আইডি কার্ড কিভাবে সংশোধন করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা চাইলে উপরের পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করে নিতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ