ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে করণীয়

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারী যদি একটু অসাবধানতায় কাজ করে, তাহলে একজন সাধারণ মানুষ এর সীমাহীন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়াঁয়।

কোন প্রকার ভুলের কারণে ভোটার তালিকা থেকে জীবিত মানুষ এর নাম কর্তন হয়ে গেলে পুনারায় ঠিক করার করণীয় কি?

আপনার নিজের সাথে বা পরিবারের কোন সদস্যের সাথে যদি এরকম সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আপনাদের অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে।

তাই আজ আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানিয়ে দেব ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে।

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে করণীয়
ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে করণীয়

আর আপনি যদি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে চান। তাহলে আমাদের দেওয়া আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভোটার তালিকা থেকে একজন জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হলে সেই ব্যক্তির যে সকল ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় সেটি যন্ত্রণাদায়ক।

উক্ত যন্ত্রণা একমাত্র সেই মানুষ বোঝে, যার নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন হয়ে গেছে।

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন নিয়ে একটি ঘটনা আপনার সাথে শেয়ার করছি।

কয়েক মাস পূর্বে একজন মানুষ এসে জিজ্ঞাসা করেছিল, ভাতিজা দেখো তো আমার শরীরটা স্পর্শ করে আমি বেচেঁ আছি নাকি মারা গেছি।

আমি হেসে বলাম যে, চাচা হঠাৎ করে আপনি কি আবুলতাবল বকছেন। আপনিতো নিজের পায়েই দায়ে আছেন।

আপনি তো হেটে হেটে আমার সামনে চলে আসলেন, কথা বলছেন। কোন ব্যক্তি মারা গেলে কি এ গুলো করতে পারে নাকি।

তখন সেই লোকটি বলল আমি ভুত হয়েও তো আসতে পারি তুমি আমাকে একটু স্পর্শ করো। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। তারপরে তারা শরীর ছুঁয়ে দেখলাম আর অনুভব করার যে তিনি একজন জীবিত মানুষ।

আমি তাকে প্রশ্ন করলাম যে, চাচা আপনার কি হয়েছে একটু পরিষ্কার করে বলবেন কি?

সেই সময় চাচা লোকটি বললো আমি গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। ভোটার তালিকায় নামি আপনার নাম নেই।

তারপরে, উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলাম। কি জন্য আমার নাম ভোটার তালিকায় নেই। অফিসের একজন স্টাফ আমার জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডটি নিয়ে ভিতরে গেলেন।

ফিরে এসে বললেন যে চাচা আপনি তো মারা গেছেন। মানে আপনার নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করা হয়েছে।

কি জন্য আমার নাম কর্তন করা হয়েছে, সেসব কিছুই আমাকে বললো না। শুধু বলল যে আপনি উপজেলা নির্বাচন অফিসার বরার একটি দরখাস্ত লিখেন।

আবেদন এর সঙ্গে সামান্য কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। যে গুলো সাবমিট করলে, কর্তন ঠিক হয়ে যাবে, তবে একটু বেশি সময় লাগবে।

তো এখন আমি ভোট তো দিতে পারলাম না। এখন আমি সিম ক্রয় করা, বিকাশ/ রকেট/ নগদ ইত্যাদি একাউন্ট খোলা সহ অন্যান্য কাজে ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করতে পাচ্ছি না।

ওয়ার্ড মেম্বার আমারেক একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে চেয়েছিলেন সেটিও আর করা হয়নি। এরকম ভাবে লোকটি আমাকে সকল প্রকার সমস্যার কথা জানালেন।

আমি সেই চাচাকে আবার প্রশ্ন করলাম গত 1-2 বছর এর মধ্যে আপনার পরিবারের কোন সদস্য এর মৃত্যু হয়েছে কি না।

তিনি জানালেন যে হ্যা বাবা ১ বছর আগে আমার আম্মা মারা গেছে। হঠাৎ একজন পরিচিত লোক কে দেখে তিনি তাকে ডাক দিলেন। আর বললেন তাকে এবং সাথে আমাকেও বললেন যে, আমি অন্য সময় তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তিনি এই কথা বলে চলে গেলেন।

বয়স্ক চাচাটির ভোগান্তির কথা শুনু খারাপ লাগলো। এই বয়সে তিনি যে সমস্যার মাঝে পড়েছেন। কবে না কবে তার সমস্যার সমাধান হবে।

আজ এই সমস্যার জন্য কে দায়ী। এক্ষেত্রে দায়ী যেই হোক না কেন। ভোগান্তি তো সেই ব্যক্তির হচ্ছে। যার মাধ্যমে এরকম ভুল হয়েছে তার তো কোন সমস্যা নাই।

ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন না করলে, বাংলাদেশে মোট ভোটার এর সংখ্যা গণনা করার হিসাব থাকবে না।

পরিষ্কার ভোটার তালিকা প্রনয়ন এর জন্য মৃত ব্যাক্তিদের নাম কর্তন করা হয়।

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম যে কারণে কর্তন করার হয়

আপনারা সকলেই জানেন যে, হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় যারা আগে কখনও ভোটার হয় নাই। তাদের নতুন ভোটার করার জন্য তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ২নং ফরম পূরন করেন।

সেই সঙ্গে মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করার জন্য ১২ নং ফরম পূরণ করেন।

ভোটার হালনাগাদ ছাড়া সরা বছর অফিসে এসে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করে, ভোটার হওয়া যায়।

তবে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন এর কাজটি সচরাচর হালনাগাদের সময় হয়। ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন এর জন্য অফিসে তেমন কোন আবেদন পত্র জমা পড়ে না।

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম সাধারণত ০৩ (তিন) টিক কারণে করত হয়।

যেমন-

  1. তথ্য সংগ্রহকারীরর অসাবধানতা

তথ্য সংগ্রহকারী যখন বাড়ীতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। তখন মৃত ব্যক্তিদের নাম কর্তন করার জন্য ১২ নম্বর ফরম পূরণ করেন।

সেই ফরমে কর্তন যোগ্য ব্যক্তির- নাম, ঠিকনা, ভোটার নম্বর সহ আরো অন্যান্য তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। কর্তন যোগ্য ব্যক্তির ভোটার নম্বর যদি লিখতে ভুল হয়।

তবে যে মৃত্যুবরণ করেছেন তার নাম কর্তন না হয়ে ভুল করে, যার ভোটার নম্বর লেখা হয়ে যায়।

তার নামটি কর্তন হয়। অধিকাংশ সময় গুলোতে দেখা যায়। কর্তন যোগ্য ব্যক্তির নাম এবং ভোটার নম্বর এর জায়গায় তথ্য প্রদানকারীর নাম ও ভোটার নম্বর লেখা হয়ে যায়।

যা হয়েছিল সেই বয়স্ক চাচার সাথে। মারা গেছে তার মা অথচ ভুল করে, ছেলের নাম কর্তন হয়েছে ভোটার তালিকা থেকে।

  1. ডাটা এন্ট্রি অপারেটর টাইপিং

তথ্য সংগ্রহ কারী যে ১২ নং ফরম পূরণ করে ফরমটি উপজেলা রেজিস্ট্রেশন অফিসারের অনুমোদন দেওয়ার পরে।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রতিটি লোকের ভোটার নম্বর দিয়ে সার্ভারে সার্চ করে। জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ সহ দরকারী সহল ডাটা সংগ্রহ করেন।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর যখন ভোটার নাম্বার টাইপ করেন তখন কখনও কখনও নম্বর ভুল টাইপ হয়ে যায়। সেখানে অন্য ব্যক্তির তথ্য চালু হয়ে যায়।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর যদি যথেষ্ট সাবধানতার সঙ্গে কর্তন এর কাজ না করেন তবে মৃত ব্যক্তির পরিবর্তে একজন জীবিত ব্যীক্তর নাম কর্তন হয়ে যায়।

কিন্তু ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কর্তৃক তথ্য ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ যখন সার্ভারে ভোটার নাম্বার দিয়ে সার্চ করা হয়। তখন যদি নম্বর টাইপে ভুল হয়। তখন অন্য ব্যক্তির ছবি সহ সকল তথ্য চলে আসে।

ফরমে উল্লেখিত কর্তনকৃত ব্যক্তির নাম ও সার্চ করে পাওয়া ব্যক্তির নাম যাচািই করে দেখা হয়। যদি মিল থাকে বোঝা যায় নম্বরটি সঠিক রয়েছে।

তারপরেও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দ্বারা পূরণ কৃত তথ্য ভুল হতে পারে।

  1. শক্রতার কারণে তথ্য প্রদান করা

আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না। সেই যে, শক্রতা আপনার সাথে আমার। তাই আমি কি করলাম হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারী কে কনভেন্স করলাম।

আর বলালম যে আরে স্যার একজন লোক দুই মাস হলো মারা গেছে যদি নাম কর্তন এর কাজ চলমান থাকে তবে তার নামটি কর্তন করে দিতে পারেন।

তথ্য সংগ্রহকারী দেখলেন যে, একটি ফরম পূরণ করলেই তো নির্ধারিত পরিমানের টাকা পাওয়া যাবে। আবার এদিকে পাকা খবর পেলাম তবে ফরমটি পূরণ করি।

এরকম ভাবে ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু এরকম শক্রতা মূলক কাজ হয়না বললেই চলে। আর যদি কেউ এমনটা করে থোকে তার সংখ্যাও অনেক কম।

ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন হয়ে গেলে তা পুনরায় ঠিক করার জন্য করণীয় কি? সেই বিষয়ে জানতে নিচের আলোচনা মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত নাম কর্ত হয়ে গেলে করণীয়

ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হলে তা পুনরায় ফিরে পাওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ।

কারণ মাঠ পর্যায় থেকে উক্ত কাজ গুলো করা যেত না। কর্তন কৃত ভোটার রোল ব্যাক করার কাজ একমাত্র হেড অফিস থেকে হয়।

কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে আবেদন করলেই চলবে।

তবে, বর্তমান সময়ে ভুল বসত ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যাক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে সেটি ঠিক করার কাজ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে করা যায়।

তার জন্য আপনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দরকার হব।

সেগুলো হচ্ছে-

  • সরাকারি হাসপাতালে চাকরিরত এমন কোন একজন এমবিবিএস ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল রিপোর্ট নিতে হবে। তিনি আপনাকে একটি প্রত্যয়ন করবে যে, আপনি মারা জাননি এখনও জীবিত রয়েছেন।
  • চ্যায়ারম্যা/ মেয়র/ কাউন্সিল এর নিকট হতে জীবিত আছেন মর্মে প্রত্যয়ন পত্র ও নাগরকত্ব সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
  • আবেদনকারীরর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বরাবর আবেদন সাবমিট করতে হবে।

উপরোক্ত সকল দরকারী কাগজপত্র সংগ্রহ করার পরে, আপনাকে স্ব-শরীরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হব।

তারপরে নির্দিষ্ট সময় এর মধ্যে আপনার জীবিত ভোটার আইডি কার্ড গ্রহণ করতে পারবেন। এবং ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশের সকল কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আজ আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানানো হলো, ভোটার তালিকা থেকে জীবিত ব্যক্তির নাম কর্তন হয়ে গেলে করণীয় কি? আপনি যদি উক্ত আলোচনা পড়েন তাহলে সঠিক তথ্য জানতে পারছেন।

সেই সঙ্গে আমাদের লেখা আপনার কাছে কেমন লাগলো। অবশ্যই একটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top