এনজিও কি : এনজিও এর কাজ এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এনজিও বা নন গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন শব্দটি আমরা সকলেই শুনেছি।
হয়তো আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন, এই এনজিও হচ্ছে এক ধরনের সংস্থা। যেগুলো বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে।

আর তাই এই বিষয়টি ভালো করে জানানোর জন্য আজকের এই আর্টিকেলে, এনজিও কি এ বিষয়ে সঠিক ধারণা দেওয়া হবে। যার ফলে আপনারা এনজিও সম্পর্কে সঠিক ধারণা সংগ্রহ করতে পারবেন।
তাই চলুন, জেনে নেয়া যাক এনজিও কি, এনজিওর কাজ এবং এনজিওর বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
এনজিও কি ?
এনজিও অর্থ হচ্ছে- Non-governmental organization যার সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে এনজিও। একটি এনজিও সংস্থা এক ধরনের অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
এই এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত কোন সরকারের আওতাধীন না থেকে স্বাধীন কিভাবে কাজ করা যায়। এনজিও গুলোকে অনেক কম সময় সিভিল সোসাইটি বা সোশ্যাল সমাজে বলা হয়।
এই এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক বা রাজনৈতিক লক্ষ্য যেমন- মানবিক কারণ, পরিবেশের কল্যাণের জন্য সম্প্রদায়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে গঠিত হয়।
আর এই ধরনের এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক উন্নতি সাধন, সহায়তা এবং মানবকল্যাণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সংজ্ঞা অনুযায়ী বলা যায়, এনজিও গুলো প্রধানত অলাভজনক সংস্থা হলেও, প্রতিবছর এনজিও গুলোতে, প্রায় লক্ষ লক্ষ এমনকি কোটি কোটি ডলার পর্যন্ত বাজেট চলে যেতে পারে।
তাই এই এনজিওগুলোর সরকারি অবদান, ব্যক্তিগত অনুদান এবং সদস্যদের দেওয়া দান এবং বিভিন্ন তহবিল ওশের উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করে থাকে। আর এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূলত এনজিও বলা হয়।
এনজিও এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি ?
এনজিও গুলোর বৈশিষ্ট্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সামাজিক এবং আইনগত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে থাকে।
তা কিন্তু সাধারণভাবে দেখলে, আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর বেশ কত গুলো প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য দেখতে পারি। যেমন-
স্বেচ্ছা সেবী সমিতি
এনজিও গুলো তৈরি হয় নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সাধারণ আগ্রার ওপর নির্ভর করে। মূলত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো তাদের সমমনস্ক স্বেচ্ছাসেবতের দলের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে।
যারা নির্দিষ্ট কোন সাধারণ সমস্যার সমাধানের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে একত্রিত হয়ে কাজ করে।
স্বায়ত্তশাসিত
এই ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সর্বত্রভাবে সরকারের শাসন, নিয়ন্ত্রণ এবং হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত এক ধরনের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
এই নন গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন গুলো তাদের নিজস্ব নীতি এবং পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে যায়।
সেবামূলক উদ্দেশ্য
এনজিও গুলো বিভিন্ন ধরনের সেবা মুলক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন। বিশেষ করে এই প্রতিষ্ঠান গুলো কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন সুবিধা ও লভ্যাংশ খুঁজেন না।
এই সকল এনজিও শুধুমাত্র এলাকার জনসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করা যায়।
নিজস্ব তহবিল
এই নন গভারমেন্টাল প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের নিজস্ব তহবিল তৈরি করে এবং বজায় রাখে। প্রধানত এই প্রতিষ্ঠানগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে থাকে।
এমন অনেক বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এনজিও গুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু নন গভারমেন্টাল অর্গানাইজেশন আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও আর্থিক সহায়তা ভোগ করে থাকেন। এ বিষয় গুলো ছাড়া আর অসংখ্য এনজিআর বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এনজিও এর কাজ কি ?
বর্তমান যুগের দাঁড়িয়ে এনজিও গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, দেশের মানুষ গুলোর জন্য। এনজিও গুলো সরকারের এখতিয়ার এর বাইরে গিয়ে সমাজের শূন্যস্থানগুলো পূরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সমাজের উদ্দেশ্য-এ করা তাদের বিশেষ কতগুলো কাজ সম্পর্কে নিচের অংশে আলোচনা করা হলো।
সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা
সাধারণ মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে এই ধরনের এনজিও গুলো আমাদের সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রধান অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুঃস্থ এবং দরিদ্রদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছেন।
নারীর ক্ষমতায়ন
গ্রামের নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করার উপযোগী করে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের সমাজে হওয়া নারীদের উপর অত্যাচার যেমন- যৌতুক, সতীদাহ, গার্হস্থ নিষ্ঠুরতা, সামাজিক হুমকি ইত্যাদি কমানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করা যাচ্ছে।
এছাড়া নারীদের বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। এ সময়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার জন্য এই এনজিও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
প্রগতিশীল উন্নয়ন
মানুষ তাদের নিজের জীবনযাত্রা কে উন্নত সাধন করতে প্রাকৃতিক পরিবেশকে নির্বিশেষে ধ্বংস করে চলেছে। এ বিষয়ে এনজিও গুলো বিশেষভাবে নজরদারি চালাচ্ছে।
তারা প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করছে। যাতে করে পরিবেশগত ক্ষতির কারণে আমাদের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়।
সরকার এর কর্মক্ষমতাকে উন্নত করে
বাংলাদেশ সরকার প্রক্রিয়াশীলভাবে কাজ করছে কিনা এবং নাগরিকদের সমস্যার সমাধান করছে কিনা এই সম্পর্কে নিশ্চিত করতে অনেক এনজিও কাজ করে যাচ্ছে।
যার ফলে সরকার দেশ এবং নাগরিকদের প্রতি দায়িত্বশীল থাকে। এদের নিজস্ব গবেষণার দল এবং দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যকে সাধনের জন্য উৎসাহিত করে।
শিশুদের শিক্ষা
বর্তমানে এমন অসংখ্য এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অনেক সময় তারা গ্রামীন স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে পাঠদান, কম্পিউটার শিক্ষা এবং বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করে থাকে।
এমনকি পথ শিশু, অনাথ এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান বাসস্থান এবং সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
যুব সমাজের উন্নয়ন
বিভিন্ন ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠান সমাজের যুবক সম্প্রদায়ের পথে থাকে বিকশিত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছেন। যেখানে বিভিন্ন সেক্টরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
এ বিষয় গুলো ছাড়া এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গুলো সৃষ্টি করা যাচ্ছে। যা সাধারণ জনগণের অনেক সুবিধা হচ্ছে।
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা আপনারা যারা google সন্ধান করে জানতে চান? এনজিও কি ? তাদের উদ্দেশ্যে আমরা এনজিও সম্পর্কে যাবতীয় ধারনা প্রদান করেছি।
এখন এই এনজিও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার যদি আরো কোন কিছু জানার থাকে, অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।