গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি : আমরা জানি পুরাতন যে, কোন কিছুই বিক্রি করতে গেলে, দাম অনেক কম হয়। সে অনুযায়ী আপনি যদি কোন পুরাতন গাড়ি বিক্রি করতে যান। সে ক্ষেত্রে দাম অনেক কম হবে।

আর এই পুরাতন গাড়ি গুলো লোকেরা কিনতে বেশিরভাগ আগ্রহী থাকে। অনেকে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন টাকার প্রয়োজনে, তাদের পছন্দের গাড়ি গুলো কিছুদিন চালিয়ে বিক্রি করে দেন।

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি
গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি

আর সাধারণত পুরাতন গাড়ি বিক্রি করতে গেলে, নতুন এর তুলনায় দাম হয়ে যায় অর্ধেক।

তো পুরাতন গাড়ি কেনা-বেচার সময় গাড়ির মালিকানা পড়েবর্তন করতে চাইলে কিছু আইনের জটিলতায় পড়তে হয়। যার কারণে ক্রেতা এবং বিক্রেত ‘রা এই আইনের জটিলতায় যেতে চান না।

তবে আইনগতভাবে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে, পুরাতন গাড়ি কেনা বেচা যায়। আর যখন আপনার গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা থাকবে, রেজিস্ট্রেশন সহ গাড়ি বিক্রি করলে, আপনাকে অবশ্যই আইনি পলিসি অনুসরণ করে বিক্রি করতে হবে।

আপনি যদি আইনি বিষয়গুলো মান্য না করে, গাড়ি বিক্রি করেন। সে ক্ষেত্রে নানাবিধি বিপদে পড়তে পারেন।

এ বিষয়ে আমি আপনাকে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিতে চাই। মনে করুন আপনি যে গাড়িটি বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি সেই গাড়িতে, একটি মেয়েকে অপহরণ করেছে।

এখন সে গাড়ির টাকা পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। পুলিশ সেই গাড়িটি জব্দ করেন। এখন দেখা গেছে গাড়িটি আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা তখন কিন্তু আপনি বড় ধরনের বিপদে ফেঁসে যাবেন।

অন্যদিকে আপনি যদি গাড়ি মার্কেট থেকে ক্রয় করার সময় রেজিস্ট্রেশন না করে থাকেন। সেক্ষেত্রেও কিন্তু গাড়ি কিছুদিন চালিয়ে বিক্রি করার পরে, নানাবিধের সমস্যার সম্মুখীন হবেন।

মনে করুন আপনি যে গাড়িটি কিনেছেন সেটি রেজিস্ট্রেশন কার সম্পন্ন করেননি। সেসময় বিক্রেতাদের দিয়ে আপনার নামে মিথ্যা চরের মামলা করে তাহলে, কিন্তু আপনি অনেক বড় বিপদে পড়বেন।

তাই এই সকল সমস্যা দূরে রেখে, গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করার জন্য অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করতে হবে। তাই আপনারা পুরাতন যে কোন গাড়ি বিক্রি করতে চাইলে, আইনি বিষয়গুলো মাথায় রেখে, তারপর আপনার গাড়ি যে কারো কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি

আপনি যদি পুরাতন গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে চান? সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করতে হবে। আর সেই ধারণা দেওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি প্রস্তুত করেছি।

তো চলুন আর সময় নষ্ট না করে, গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।

গাড়ির কাগজপত্র

গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় কাগজ পত্র গুলো তিন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-

১. ক্রেতা হিসেবে,

২. বিক্রেতা হিসেবে এবং

৩. ওয়ারিশ সূত্রে।

গাড়ি ক্রেতার যে কাগজপত্র গুলো লাগবে ?

আপনি যদি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করে গাড়ি কিনতে চান? সে ক্ষেত্রে আপনার যে কাগজপত্র গুলো লাগবে। সেগুলো হচ্ছে-

১. একটি টিও ফরম

গাড়ি ক্রয় করার সময় প্রথমে যে কাগজ প্রয়োজন হবে সেটি হচ্ছে টিও ফরম সংগ্রহ করা। আপনারা অফিস বা অনলাইনের মাধ্যমে টিও ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।

অনলাইন থেকে টিও ফর্ম ডাউনলোড করতে চাইলে, বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। টিও ফরম এ ক্রেতার স্বাক্ষর ও টিটিও তে ক্রেতার নমুন স্বাক্ষার যুক্ত করতে হবে।

২. টিও ফরমের ফি

টিও ফরম পূরণের পর ফি পরিশোধ করতে হয়। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে এবং ফি রশিদের মূল কপি বিআরটিএ অফিসে সাবমিট করতে হবে।

ফি জমা দেওয়ার বিষয়টি বিআরটিএ অফিসে গিয়ে করলে অনেক কাজ সহজ হবে এবং অনেক কাজ একসাথে করা যাবে। সকল প্রকার কাগজপত্র গোছানো হয়ে গেলে ফি পরিশোধ করতে হবে।

৩. কাগজপত্র জমা

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে হবে। তো কি কি কাগজপত্র থাকলে আপনারা গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন সে বিষয়ে জানতে নিচের তথ্য গুলো দেখুন।

  • গাড়ি ক্রেতার টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে
  • গাড়ি ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে
  • গাড়ি ক্রেতার বর্তমান ঠিকানা
  • গাড়ি ক্রেতার মোবাইল নাম্বার
  • গাড়িটা তার বিদ্যুৎ বিলের সত্যায়িত ফটোকপি। ইত্যাদি কাগজপত্র থাকতে হবে।

আর আপনাদের যদি উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো না থাকে। সেক্ষেত্রে, নতুন এবং পুরাতন কোন গাড়ি মালিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন না।

সত্যায়িত কাগজপত্র

গাড়িটা তার ফিটনেস এবং রোড পারমিট হচ্ছে গাড়ির একটি অন্যতম জরুরি কাগজ। উক্ত রোড পারমিটের জন্য মূল রেজিস্ট্রেশন ফটোকপি, ডিজিটাল সার্টিফিকেট এবং নতুন টেক্স টু ক্যান এর সত্যায়িত কপি প্রদান করতে হবে।

চিঠি প্রেরণ

গাড়ির পাতা যদি ব্যক্তিগত ব্যবহার করার জন্য গাড়িটি ক্রয় করেন তাহলে সাধারণ ফর্ম এবং ব্যাথা যদি প্রতিষ্ঠানের জন্য গাড়ি ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে অফিসিয়াল পেডে চিঠি প্রস্তুত করে প্রদান করতে হবে।

এছাড়া ছবিসহ জুডিশিয়াল ফর্ম বা ননজডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রস্তুত করতে হবে। যা আপনাকে ২০০ টাকা মূল্যের দলিল ব্যবহার করতে হবে।

ব্লক লেটার

উপরোক্ত সকল কাগজপত্র দাখিল করার সময় সবকিছুই ইংরেজিতে বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। নির্দিষ্ট যে নমুনা স্বাক্ষর ফরমে গাড়ি ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর এবং তিন কপি রঙিন স্টাম সাইজের ছবি যুক্ত করতে হবে।

সরেজমিনে উপস্থাপন

যে কোন গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই সবকিছু দেখিয়ে নেওয়া বা দেখে নেওয়া উত্তম। তাই বিআরটিএ অফিস এ অবশ্যই গাড়িটি নিয়ে আসতে হবে।

বিআরটিএতে ফ্রি জমা দেওয়ার পরে, ১০০নং কক্ষে কাগজপত্র দেখিয়ে স্বাক্ষরিত করতে হবে। তারপর সকল কাগজপত্র নিয়ে পরিদর্শন করতে গিয়ে জানাতে হবে। আপনারা গাড়ির মালিক পরিবর্তন করতে আগ্রহী। তারপর একজন পরিদর্শক এসে আপনার গাড়িটি দেখে একটি সিল মেরে দেবেন তারপর কাগজের স্বাক্ষর করবেন।

এক্ষেত্রে কাগজপত্র গুলো নিয়ে বিআরটিএ বিল্ডিং এর দোতালায় গিয়ে, দেখাতে হবে। সেখান থেকে একত্রিত স্লিপ দেবে যা পরবর্তীতে কবে বিআরটিএতে উপস্থিত হতে হবে। সে বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। তারপর যখন সেই রুম থেকে বেরিয়ে আসবেন সেটি ১০০ নং কক্ষে দেখাবেন।

বিক্রেতার যেসব কাগজপত্র লাগবে ?

একটি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে, ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতারও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। তো কি কি কাগজপত্র লাগবে সে বিষয়ে জানতে নিচের তথ্যগুলো দেখুন।

টিটিও ফরম

গাড়ি বিক্রেতা হিসেবে ফর্মে টিটিও এবং বিক্রি ‘র রশিদ অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এবং বিক্রেতার এবং রাজস্ব স্ট্যাম্পের স্বাক্ষর করতে হবে।

গাড়ি বিক্রির দলিল

ছবিসহ একটি জুডিশিয়াল বা নন জুডিশিয়াল ২০০ দামের স্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হবে। বৃক্ষ সংক্রান্ত হলে শুধু এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

সার্টিফিকেট জমা

গাড়ির ভিতর তার সাধারণ ব্যক্তি হলে সাধারণ চিঠি লাগবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক হলে অবশ্যই কোম্পানির হেড প্যাডে ইন্টিমেশন, বোর্ড রেজুলেশন, অথরাইজেশন সংযুক্ত করতে হবে।

চিঠি প্রেরণ

বিক্রয় যোগ্য গাড়িটি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেদিন আগে পরিশোধ করতে হবে। সংক্রান্ত ছাড়পত্র, লোন স্টেটম্যান এবং ব্যাংক কর্তৃক সহকারী পরিচালক বিআরটিএ বরাবর অনুরোধপত্র যার মূল্য ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা সাবমিট করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র

গাড়ি বিক্রয় তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র এর অধিকারী সম্পন্ন হতে হবে। যা গাড়ি বিক্রির সময় দেখাতে হবে।

গাড়ি বিক্রেতার দায়িত্ব

একটি গাড়ি বিক্রেতার 14 দিনের মধ্যে বিক্রেতা যে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সেই এলাকার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কে গাড়ি নিবন্ধনের বিষয়ে জানিয়ে দিতে হবে। তার পাশাপাশি হস্তান্তর গাড়ি সেই রিপোর্টের একটি কপি প্রদান করতে হবে।

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আপনারা যারা গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি কোথায় থাকেন। তারা উপরে উল্লেখিত আলোচনা অনুসরণ করে, গাড়ি ক্রেতা এবং বিক্রেতার কাগজ পত্র সংগ্রহ করে।

বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করে, খুব সহজেই গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।

তো গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতির সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে। তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top