ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার এবং এর কাজ কি?

ইঞ্জিনিয়ারিং কি : আজকের এই আর্টিকেলে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা জানি মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারদের উন্নত চিন্তাভাবনা এবং অকল্পনীয় উদ্ভাবনের শক্তি।

উক্ত উদ্ভাবনে সবথেকে মানুষ একদম সৃষ্টির গোড়া থেকেই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন। আর বর্তমান সময়ের সভ্য জগতের মানুষ এই উদ্ভাবনে সত্যের চর্চাকে নাম দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিদ্যা।

ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার এবং এর কাজ কি?
ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার এবং এর কাজ কি?

আমাদের ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখতে পারবো যে সারা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে অজস্র ইঞ্জিনিয়ারিং এর নিদর্শন।

সেটি বালিঘরের ব্যবহার হোক আর সুদূর ইতালির পিসার হ্যালোনো টাওয়ার বা বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্যের মতো, বিশাল স্থাপত্যই হোক না কেন? সকল কিছুর সাথেই সরাসরি যুক্ত রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং।

কিন্তু ১৪ শতকের চাকা কিংবা `Wheel’ এর আবিষ্কার কে ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্পষ্টতম প্রথম ব্যবহারিক নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

তো আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে, ইঞ্জিনিয়ারিং কি, ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবো।

তাই আমাদের লেখা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়তে থাকুন।

ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?

ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে মূলত সাইন্স, টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিক্স শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত একটি শাখা। এই শাখাতে বিদ্যার্থীদের মূলত চার ধরনের বিষয়ের উপর বিস্তারিতভাবে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে।

আর এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের সভ্যতাই প্রায় হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। প্রধানত ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দের উৎপত্তি হয়েছে লেটিন Engine হতে।

মানে যার অর্থ হচ্ছে সহজ জাত গুণ, বিশেষত মানসিক শক্তি বা একটি শোকৌশল আবিষ্কার। আপনাকে আরো সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায় ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে বিজ্ঞান এবং অংকের প্রয়োগিক ব্যবহারের মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান করার বিদ্যা।

বিশেষ করে এই বিদ্যাতে বিজ্ঞান, অংক, প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার পাশাপাশি শিল্পকলার বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং কে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় কাজের পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যে সাইন্স ও ম্যাথমেটিক্স ব্যবহার করে, বিভিন্ন ধরনের মেশিন ডিজাইন করা, তৈরি করা এবং টেস্ট করা হয়।

তো এই ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে যারা এ ধরনের আবিষ্কার গুলো করে থাকে। বিশেষ করে যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ এর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকেন, তারাই হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার।

তো আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত কি। যদি না বুঝে থাকেন তাহলে দয়া করে উপরের আলোচনা আরো একবার পড়ে নিন।

ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার ?

আপনারা উপরের আলোচনায় জেনে নিতে পারলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কি, এখন আমি আপনাদের সুবিধার্থে জানাবো ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার ও কি কি।

আমরা জানি ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে এমন একটি পেশা যেখানে একাধিক শাখা আছে। এবং সেই সকল শাখার জন্য আলাদা ভাবে পড়াশোনার প্রয়োজন পড়ে।

কিন্তু এখানে আমরা বেশ কিছু পরিচিত ইঞ্জিনিয়ারিং এর ধরন নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, মেশিন উৎপাদন করা হয়। যেমন- গাড়ি, ইঞ্জিন, মহাকাশযানের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নকশা তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ এর বিষয়ে জড়িত থাকে।

এই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় ইঞ্জিনিয়াররা যন্ত্রপাতি এবং কন্ট্রোল সিস্টেম এর ব্যবস্থাপনা করা থাকেন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মেশিন এবং সিস্টেম এর ডিজাইন তৈরি, কন্ট্রোল ও মনিটরিং করা হয়।

মাইক্রোচিপ এর মত অনেক ছোট যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে বড় ট্রান্সমিশন ও পাওয়ার তৈরির সিস্টেম পর্যন্ত সবকিছুই এ ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় তৈরি করা হয়।

এই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে, টেলিকমোনুকেশন, কম্পিউটার সিস্টেম, ইলেকট্রোম্যাগনেট্যাক ডিভাইস তৈরি এবং ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত বিষয়গুলো সংযুক্ত থাকে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার এর সব থেকে জনপ্রিয় একটি শাখার নাম। এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে বিভিন্ন ধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট যেমন- রেলওয়ে, রাস্তা, ব্রিজ, বিল্ডিং তৈরি করা, কনস্ট্রাকশন করা, মেরামত করা এবং ইন্সপেকশন এর কাজগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এ সকল ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি এবং বেসরকারি পরিচালনার পাশাপাশি, ইঞ্জিনিয়ারিং এর শাখা- যেমন সার্ভেয়িং, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এনভারমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ করে থাকে।

এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং

এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে- ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি বিশেষ শাখা। এরো স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে এয়ারক্র্যাফট এবং স্পেস ক্রাফটের যন্ত্রাংশ এর ডিজাইন তৈরি করা, নির্মাণ করা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ গুলো করা থাকে।

এক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়াররা যানবাহনের এরোডিনামিক্স, পাওয়ার প্লান্ট, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেম, ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল এবং নেভিগেশন সিস্টেম এর উপর কাজ করেন।

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

কেমিক্যাল শাখায় ইঞ্জিনিয়াররা ফিজিক্স, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর শর্ত অনুযায়ী বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সিস্টেম ও পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা করা থাকেন।

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা কম্পিউটারের হার্ডওয়ার, সিস্টেম সফটওয়্যার এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করে থাকেন।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা, যন্ত্রপাতি এবং সিস্টেমগুলোর ডিজাইন এবং পর্যালোচনা করে থাকেন।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান কাজ হলো সামুদ্রিক জগতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এই ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ শিপিং, তেল শোধনাগার, অন বোর্ডিং, সাবমেরিন ইত্যাদি ডিজাইন এর কাজ এবং নির্মাণ করে থাকেন।

উপরের আলোচনায় আপনারা যে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রকার সম্পর্কে জানতে পারলেন। এগুলো ছাড়া আরো অসংখ্য প্রকার রয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর শাখায়। তবে আমরা সবথেকে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকার গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিলাম।

ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ কি ?

এখন আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব, ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি। বর্তমানে আধুনিক সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় এতগুলো শাখা আছে। যেগুলো আলাদা করে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজগুলোর বর্ণনা দেওয়া একেবারে সহজ হবে না।

তারপরও বিভিন্ন শাখার ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকেন।

যেমন- ইঞ্জিনিয়াররা অ্যাডভান্স প্রস্থেটিকসের উপর কাজ করে থাকেন। নতুন মেটেরিয়াল তৈরি করেন, ইঞ্জিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির সন্ধান করেন, ঝরঝর জলের সিস্টেম তৈরি করেন এবং বিভিন্ন ব্রিজ নির্মাণ করেন।

তার পাশাপাশি সেল মেমব্রেন থেকে স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত সকলেই বিজ্ঞান এবং অঙ্কের ব্যবহার করে বিশ্বের সব আশ্চর্য এবং জটিল সমস্যা গুলোর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।

যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে মানব জীবন কে আরো বেশি করে, আরামদায়ক করে তোলার উদ্দেশ্যে দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করে দেওয়া।

তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট ডিজাইন করা, মূল্যায়ন করা, তৈরি করা, পরীক্ষা করা, পরিবর্তন করা, পর্যবেক্ষণ করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করাও ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের মূলমন্ত্রণ।

তো বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ গুলো কি কি।

শেষ কথাঃ

আপনারা যারা আজকের আলোচনা মনোযোগ সহকারে পড়লেন তারা অবশ্যই জানতে পারলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কি ? ইঞ্জিনিয়ারিং কত প্রকার এবং এর কাজ কি।

এখন পুরো আলোচনা করার পরে, আপনার যদি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে, অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ।

আপনার জন্য আরও আর্টিকেল

Leave a Comment