ছোট ছোট কাজ করে আয় করার কথা এখন আর মিথ্যে নয়। ইন্টারনেটের যুগে যে কেউ চাইলেই এখন ঘরে বসে উপার্জন করতে পারেন টাকা। অবশ্য, এর কিছু কিছু কাজের জন্য আপনার থাকতে হবে দক্ষতা। আবার, কিছু কিছু কাজের জন্য আপনার কোন দক্ষতার প্রয়োজন নেই। একদম কোন রকম, দক্ষতা অভিজ্ঞতা ছাড়াই আপনারা করতে পারবেন কাজগুলো।
আজ সেই সকল কাজ নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো।
অনলাইনে আয়ের জনপ্রিয় কিছু মাধ্যম [Micro Jobs]
১. ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)
বর্তমান যুগে, ফ্রিল্যান্সিং খুব জনপ্রিয় একটি উপায়। ছাত্র থেকে শুরু করে চাকুরীজীবী, সবাই বাড়তি উপার্জনের আসায় ফ্রিল্যান্সিং করে। অবশ্য এর জন্য আপনার কিছু বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন। আরও পড়ুনঃ ছাত্র ছাত্রীদের জন্য অনলাইনে আয়ের সেরা মাধ্যমগুলো।
দক্ষতা অনুসারে বিভাগ নির্বাচন করে নেমে পড়বেন কাজে। শুরুতে কাজ পেতে একটু কষ্ট হবে। কিন্তু, একবার কাজ পেয়ে যাওয়ার পর, আপনার আর থামতে হবে না।
প্রতিদিনই কেউ না কেউ আপনাকে কাজ করার জন্য অনুরোধ করবে। তখন, আপনি আপনার ইচ্ছে অনুসারে কাজ করেন অথবা করবেন না।
আজকাল তো এমন হয়েছে ফ্রিল্যান্সিংকে কেউ কেউ পেশা হিসেবে নিয়ে নিচ্ছে। আর নিবেই বা নয় কেনো, নিজের মর্জি মতো কাজ করে যদি জীবীকে নির্বাহ হয়, তবে সেটাকে পেশা হিসেবে নিবে না কেনো?
তাছাড়া, ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক টাকাই উপার্জন করা যায়। মোটামুটি ভাবে করলেই মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা চলে আসে এই মাধ্যম থেকে।
ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে প্রথম প্রথম কাজের জন্য আপনাকে অনেক দৌড়াদৌড়ি বা অনেকেই রিকোয়েস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাবেন এমন একটি সময় আসবে যখন অনেকেই আপনাকে কাজ দেওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করবে। সুতরাং বসে না থেকে কোন না কোন একটি কাজ শিখে আজি নেমে পড়ুন অনলাইনে আয় করার জন্য।
২. ওয়েবসাইট রিভিউ
এই কাজটি খুবই মজার। আই কাজটি করার জন্য প্রথমে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে ভিডিও টেস্ট সমাপ্ত করতে হবে। তারপর, আপনার ইমেলে নতুন ভিডিও টেস্টের নোটিফিকেশন আশা শুরু করবে। সেখানে, তারা আপনাকে একটা ওয়েবসাইটের রিভিউ বা টেস্ট করার কাজ দিবে। আপনাকে সেই কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি, আপনাকে আপনার কাজের স্ক্রিনশর্ট তুলে তাদেরকে পাঠাতে হবে। আরও পড়ুনঃ ওয়েব ডিজাইন করে অনলাইনে আয়
এই কাজটি করার জন্য প্রতিটি আপনার ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগবে।
মূলত, এই কাজের মাধ্যমে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করে টেস্ট করে দেখতে হবে, একজন ইউজারের জন্য ওয়েবসাইটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর, ওয়েবসাইটটি কতোটুকু ইউজার ফ্রেন্ডলি।
এই ছোট্ট কাজটি করে, প্রতিটি ওয়েবসাইট রিভিউর জন্য আপনি আয় করবেন ১০ থেকে ১৫ ডলার বা ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
৩. অ্যাপ ডাউনলোড
এই কাজটি করার জন্য আপনাকে অনলাইন থেকে অ্যাপ নামাতে হবে। তারপর, সেই অ্যাপের যেকোনো সেবা ব্যবহার করতে হবে। এরকমই একটি ওয়েবসাইট হলো পার্ক। এই ওয়েবসাইটি খুব দ্রুত এগোচ্ছে। এবং, এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই আপনার ইনকামের জন্য খুলছে নতুন নতুন রাস্তা।
এই ওয়েবসাইটে সবচেয়ে ভাল এবং দ্রুত উপার্জনের উপায় হলো পার্ক টিভি। তাদের অ্যাপের মধ্য থেকে পার্ক টিভি অ্যাপটি নামিয়ে ব্যবহার করাই আপনার কাজ।
তবে ,এর জন্য তারা আপনাকে কোন টাকা দিবে না। পরিবর্তে, অনলাইন গিফট কার্ড দিবে। এই কার্ডটি দিয়ে আপনি আমাজন, ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, স্টারবাক্স, টার্গেটসহ আরও অনেক অনলাইন সেলিং ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন।
৪. ভিডিও দেখা
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিডিও দেখে আপনি আয় করতে পারেন। মূলত, এখানে আপনার কাজ হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ভিডিও দেখা।
এখানে ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করলে, তারা আপনাকে প্রতিদিন কিছু না কিছু ভিডিও দেখতে দিবে। আপনার কাজ হবে সেই ভিডিওগুলো দেখে ভিউ বাড়ানো। বিনিময়ে, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার একাউন্টে জমা হবে।
৫. গেম খেলে
বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ ও ওয়েবসাইট, অনলাইনে গেমের প্রতিযোগিতা করে। এখানে, একটি নির্দিষ্ট গেমে রেজিস্ট্রেশন করে, ভালো করে খেলে জিততে পারলে, আপনি জিতে নিতে পারবেন বেশ কিছু উপহার। পাশাপাশি, বেশ কিছু টাকাও আপনি উপার্জন করতে পারবেন।
এরকম ওয়েবসাইট আর অ্যাপগুলোতে প্রায়ই গেমের প্রতিযোগিতা চলে, তাই আপনি মোটামুটি ভালোই উপার্জন করতে পারবেন।
৬. ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রাইব করা
বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন ওয়েবসাইট, তাদের ভিউ বাড়ানোর জন্য সাবস্ক্রাইবার খোঁজে। প্রথম প্রথম অর্গানিক ট্রাফিক তেমন না পাওয়ায়, তারা পেইড ট্রাফিক নেয়।
তাদের এই কাজটি করার জন্য আপনার অনেকগুলো ইমেইল আইডির পাশাপাশি, পরিচিত একটা দল রাখতে হবে। তারপর, আপনিসহ তাদের সবাইকে দিয়ে ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রাইব করানোই হবে আপনার কাজ।
আরও পড়ুন: গুগল এডসেন্স থেকে মাসে $১৫০০ ডলার আয় করার উপায় । পূর্ণাঙ্গ গুগল এডসেন্স এর নিয়ম
মূলত, এই কাজের বিনিময়ে আপনি যে টাকা পাবেন, তার পরিমাণ নির্ধারিত হয় আপনি কতজন সাবস্ক্রাইবার দিতে পারবেন তার সংখ্যার উপর।
তাই, একবার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রাইবার তৈরি করতে পারলে, তাদের দিয়ে আরও ওয়েবসাইটে কাজ সাবস্ক্রাইব করাতে পারবেন। যা দিয়ে আপনার ভালোই উপার্জন হবে।
৭. ডাটা এন্ট্রি
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ পাবেন। এই কাজ করার জন্য আপনার খুব বেশি কিছু করতে হবে না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ডাটা কপি-পেস্ট অথবা টাইপ করতে হবে।
এই কাজটি করার জন্য আপনার বেশি কিছু করতে হবে না। টাইপিং স্পিড ভালো আর ইংরেজিতে দক্ষ হলেই আপনি কাজটি করতে পারবেন। পাশাপাশি, কাজটি করে আপনি দৈনিক ১০ ডলার থেকে শুরু করে ১০০০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন।
৮. অডিও শুনে লিখে
অডিও শুনে শুনে ওয়ার্ড ফাইলে লিখে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু, এই কাজটি করার জন্য আপনার শোনার ক্ষমতা ভালো হতে হবে।
কেননা, কোন ক্ষেত্রে এমন যদি হয়, আপনি একটি অডিও ঠিকভাবে না শুনে ভুল তথ্য লিখে ফেললেন।। তখন, আপনার পুরো কাজটিই নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই, এই কাজ করার জন্য আপনার ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা প্রখর হতে হবে। কেননা, একটি ভুলের কারণে হারিয়ে যেতে পারে আপনার সকল পরিশ্রমের ফসল।
কেন করবেন?
জীবনের চলার পথে অর্থের প্রয়োজন সবারই হয়। একটা নির্দিষ্ট চাকরি থেকে হয়তো প্রতিমাসেই উপার্জন হয়। কিন্তু, সেই উপার্জনের মাধ্যমও হারিয়ে যেতে পারে যেকোনো মুহুর্তে। পাশাপাশি, অনেক সময় এমনও হয় যে, খুব দ্রুত টাকা দরকার।
কিন্তু, যেখান থেকে টাকা পাবেন, তা আসতে দেরি হবে। এসবের জন্যই পাশাপাশি কিছু উপার্জনের মাধ্যম রাখা দরকার। সে হিসেবে এই ধরণের কাজগুলো খুবই উপযোগী। তাই, এধরণের কাজগুলো করতে পারেন।
কী কী লাগবে এই কাজগুলো করতে?
এই কাজগুলো করতে আপনার খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে না। এমনকি প্রয়োজন হবে না অভিজ্ঞতার। তবে, কয়েকটি জিনিসের প্রয়োজন হবে।
১. কম্পিউটার
২. দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ
৩. ইংরেজিতে দক্ষতা
৪. ভালো টাইপিং স্পীড
কী কী অসুবিধের সম্মুখীন হবে?
অন্যান্য কাজের তুলনায় এধরণের কাজগুলো অনেক সহজ। কিন্তু, এরও কিছু সমস্যা আছে। তবে, আগে থেকে সতর্ক থাকলে, খুব সহজে এদের এড়ানো যায়।
ছোট ছোট কাজের অসুবিধেসমূহ-
১. এ ধরণের কাজে অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। তাই, প্রথমে কাজ পাওয়া অনেক কঠিন।
২. এ কাজে মেধা বা দক্ষতা প্রমানের তেমন সুযোগ নেই। তাই, একটা সময় পর একঘেয়েমি চলে আসে।
৩. এ কাজ অল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হয়। করে, ফাইল আপলোড করতে হয়। কিন্তু, ইন্টারনেটের স্পিড কম থাকলে, তা আর সম্ভব হয় না।
৪. অনেক ধরণের কাজ একা শেষ করা সম্ভব হয় না। এজন্য, প্রয়োজন পড়ে অনেক মানুষের।
৫. সবসময় মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। মনোযোগ একবার ছুটে গেলে কাজে ভুল হতে পারে।
ছোট ছোট কাজ করে আয় করার উপায়গুলো একটি মানুষের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু, এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে অনেক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই, যেকোনো কাজের পাশাপাশি কিংবা কাজের অভাবে আপনি এই কাজগুলো করতে পারেন। পাশাপশি, যুক্ত করতে পারেন আপনার উপার্জনের বাড়তি একটি উৎস।
সবশেষে আমাদের পরামর্শঃ
আপনি যদি অনলাইনে মাইক্রো জবস তথা ছোট ছোট কাজ করে আয় করতে চান সে ক্ষেত্রে একটি ল্যাপটপ অথবা ভালো মানের একটি স্মার্টফোন, ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে আপনি যে কাজটি উপযুক্ত মনে করেন সেই কাজটি দিয়ে শুরু করুন আজ থেকে অনলাইনের যাত্রা।
আর হ্যাঁ আপনি কি কাজ করছেন বাকি কাজ করতে চাচ্ছেন, সে কাজ করতে গিয়ে কি ধরনের প্রবলেম হচ্ছে সেটি জানিয়ে আমাদের কমেন্ট করুন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব এবং সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব।
VERY IMPORTANT