অনলাইনে মাসে কত টাকা আয় করা যায়। (দেখে চমকে যাবেন)

অনলাইনে মাসে কত টাকা আয় করা যায়: (How much money earn from online) প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে সেইদিন দেখছিলাম জয়িতা ব্যানার্জী নামে এক মেয়ে সেমিস্টার ফি দেয়ার টাকা জোগাড় এর জন্য অনলাইন এ ইনকাম শুরু করে। আর দেখতেই দেখতেই সে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে এখন তার মাসিক আয় ১৬০০ ডলার।

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন ১৬০০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে যা দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর তাও শুধু এক মাসেই। ভেবে দেখেছেন কখনো?

অনলাইন আয় নিয়ে এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, মাসে আমি কত টাকা ইনকাম করতে পারব? তাদের জন্য একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো উপরের ঘটনাটি। হ্যাঁ, ফ্রি-ল্যান্সিং বা অনলাইন থেকে আপনি এ রকম অংকের টাকা শুধু এক মাসেই আয় করতে পারবেন। হয়তো এর চেয়েও বেশি পরিমাণে।

অনলাইন ইনকাম এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গেছে যা মানুষ এখন অফিস এর চাকরি বাদ দিয়ে এর পিছনে ঘুরছে। মাসে ১০ হাজার ডলার ইনকাম এরও উদাহরণ এখন আপনার চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে।

অনলাইনে কত টাকা আয় করা যায় দেখুন
অনলাইনে কত টাকা আয় করা যায় দেখুন

অনলাইনে সবাই কি এত টাকা ইনকাম করতে পারে?

সবাই যে এত টাকা ইনকাম করে তা কিন্তু নয়। অনলাইন এ অনেকেই আসে পার্টটাইম কিছু কাজ করতে আর নিজের পকেট মানি জোগাতে। এ রকম মানসিকতার মানুষেরা তাদের সন্তুষ্টির জন্য যা দরকার তাই পায়। যদিও অংকটা অনেক ছোট।

আবার অনেকেই আছে অনলাইনকেই নিজের কর্মস্থান বানিয়ে নেয়। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা বেশি টাকা ইনকাম করতে সক্ষম  হয়। তবে এই দুই শ্রেণীর মানুষ এর মাঝেও আরেক শ্রেণির মানুষ আছে যারা অনলাইন এ ইনকাম করতে তো আসে তবে তাদের কষ্ট করার কোনো মন মানসিকতাই থাকে না। ফলশ্রুতিতে তারা স্রোত এর জলে গা ভাসিয়ে চলে যায় অনলাইন দুনিয়া থেকে।

Read More-

আর অনলাইন এ একটা দীর্ঘস্থায়ী কাজ খুজতেও অনেক দিন চলে যায়। আপনি যে এসব উদাহরণ দেখছেন তা কিন্তু মোটেও একদিনে হয়নি। এখন হয়তো তাদের মাসে মাসে একটা ফিক্সড অ্যামাউন্ট চলে আসে। তবে একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন শুরুতে কিন্তু এমনটা মোটেও ছিল না। তবে জিনিসটা যে অসম্ভব কিছু তা কিন্তু নয়। কিছু ব্যাপার মেনে চললেই আপনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

চলুন তবে জেনে আসা যাক কি সেই বিষয়গুলি-

কি শিখবেন তা ঠিক করা ও ভালো করে কাজ শেখা –

অনলাইন এখন কিন্তু আর দু একটি কাজ নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর মধ্যে রয়েছে হাজার রকম কাজ আর তাদের চাহিদাও অনেক। তবে আপনি সবগুলো কাজ এর পিছনে মোটেও ছুটবেন না। অর্থাৎ অনলাইন এ যে হাজার হাজার কাজ রয়েছে তার সবই আপনাকে শিখতে হবে না। আপনি কেবল একটি শিখেই আপনার ইনকাম শুরু করে দিতে পারেন। হ্যা, কেবল মাত্র একটি।

তবে এ জিনিসটি খেয়াল রাখবেন যে , যে কাজটি শিখছেন তার মার্কেটপ্লেস এ ডিমান্ড বা চাহিদা কতটুকু। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলোর মধ্যে থেকেই একটি নির্বাচন করতে পারেন।

আমি আপনার কাজটি আরো একটু সহজ করে দিচ্ছি। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি হচ্ছে ওয়েব ডেভলপমেন্ট। এখন আপনি এর চাহিদা ও শিখতে পারবেন কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করে শেখা শুরু করে দিন।

আর কাজ শেখার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন আপনি এটি সারা জীবনের জন্য শিখছেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে কোনো মতেই আপনার তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। অনেকেই এই সময়টাতে এটা ভাবে যে আমি যত তাড়াতাড়ি কাজ শিখতে পারব তত তাড়াতাড়ি কাজ পাব।

হ্যাঁ, জিনিসটা ঠিক আছে। তবে এই তাড়াতাড়ি শিখতে গিয়েই যে আমরা কাজ এর ব্যাসিকটা শিখতেই ভুলে যাই। আর তাড়াহুড়ো মোটেও করবেন না। একটু সময় নিয়ে শিখুন দেখবেন আপনার দক্ষতা বেড়ে গেছে। আর তারপর যখন মার্কেটপ্লেস গুলোতে যাবেন তখন দেখবেন কাজের কি চাহিদা শুধুমাত্র আপনার কাজের।

শেখার পাশাপাশি তার প্রয়োগ করুন-

আপনার শেখাটাকে একটু কার্যকর করুন। আপনি যদি শুধু শিখেই যান তবে তা শুধু বইয়ের জ্ঞান এর মতোই আপনার মাথায় গেথে থাকবে। আর তাই এর যথাযথ প্রয়োগ করুন। আপনি যখন জিনিসটা শিখছেন তখন লোকাল কোনো ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারেন এতে করে আপনার ইনকামটা যেমন তাড়াতাড়ি শুরু হবে তেমনি আপনার উৎসাহও বাড়বে। আর এই উৎসাহের জোরেই এগিয়ে যেতে পারবেন আরো বেশিদূর।

সবার চেয়ে একটু অন্যভাবে জিনিসটাকে দেখুন-

আপনি যদি কয়েকজনের সাথে ইনকাম শুরু করেন তবে দেখবেন তারাও বাকিদের মতোই একই প্যাটার্ন অনুসরণ করছে। ওই একই জিনিস বারবার। আর ইনকামটাও একই আসবে। তাহলে এতে নতুন কি পাবেন?

Read More- ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়

হ্যাঁ, আপনি বাক্সের বাইরে এসে ভাবুন বাকিরা কিভাবে ইনকাম করছে সে কথা ভুলে যান। নিজের ইনকাম এর রাস্তা খুঁজে নিন নিজের মতো করে। যে কাজটা করছেন সেটার প্রতি একটু ভালোবাসা তৈরি করুন দেখবেন সব ঠিকঠাক আছে। আর নিজের রাস্তাটা নিজের মতো করে বানিয়ে নিন। আমি  আপনাকে  এটা বলছি না যে কারোর অভিজ্ঞতা শুনবেন না। বরং এটাই বলছি তার অভিজ্ঞতা শোনার পর আপনি নিজে থেকেই একটা পথ বানিয়ে নিন। সেই ফ্রিল্যান্সার যে ভুল করেছে আপনি তা করবেন না।

ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ান-

বর্তমান বিশ্বটা হচ্ছে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব। অর্থাৎ আপনি যত ভালোভাবে কারো সাথে কথা বলতে পারবেন বা যোগাযোগ করতে পারবেন আপনার কাজ পাওয়ার চান্স ততটাই বেশি । আর অনলাইন বিশ্ব এর কথা চিন্তা করলে এই যোগাযোগ এখন অনেকটাই ইংরেজি নির্ভর।

যার মানে হচ্ছে আপনাকে ইংরেজি দিয়ে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, কথা বলতে হবে। আর এই সময়টাই হচ্ছে ইম্প্রেশন তৈরি করার মুখ্যম সময়।

তাই আপনার ইংরেজি দক্ষতা যত বেশি হবে আপনি তত তাড়াতাড়ি ক্লায়েন্টকে রাজি করাতে পারবেন । আর যত তাড়াতাড়ি কাজ পাবেন তত তাড়াতাড়ি অন্য কাজ খোজার সুযোগ হবে। সেজন্যই ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতার উপর আপনার জোড় নজর দিতে হবে।

ইনকাম নির্ভর করে আপনি কোন বিষয়ে স্কিলড তার উপর-

হ্যাঁ, এটা সত্য যে অনলাইনে চাইলেই এখন হাজার হাজার কাজ মূহুর্তেই পাওয়া সম্ভব। স্কিলও রয়েছে অনেকে। কিন্তু সবগুলোর ডিমান্ড কিন্তু মোটেও একই নয়।

সম্প্রতি ফ্রি-ল্যান্সিং হ্যাকস নামে একটি ওয়েবসাইট তাদের এক প্রতিবেদনে সেরা ৭ টি ফ্রি-ল্যান্সিং কাজ যাদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি তাদের একটি তালিকা তৈরি করে। যেখানে কাজের ক্রমটা ছিল কিছুটা এমন-

 প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট-

সবচেয়ে বেশি এই জনপ্রিয় কাজটি এতটাই মূল্যবান যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেনই না। জেমস নাইট যিনি কিনা গুগলের একজন সাবেক প্রোগ্রামার ছিলেন। তিনি গুগলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর ফ্রি-ল্যান্সিং প্রোগ্রামার হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে এখন তিনি ঘণ্টায় প্রায় ১০০০ ডলার ইনকাম করেন।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social Media Marketing)

২০১৯ সালে আপওয়ার্ক এর সেরা দশের দুই নাম্বারে ছিল এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কাজটি। আর এর চাহিদাও অনেক বেশি। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার দিক দিয়েও এর অবস্থান অনেক উপরে। একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার ঘন্টায় প্রায় ১৫০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

ওয়েব ডিজাইনিং ও ওয়েব ডেভলপমেন্ট (Web design & Web Development)

আপওয়ার্ক এর সেরা কাজের ৭ নাম্বারে থাকা এই ওয়েব ডেভলপমেন্ট বা ডিজাইনিং এর কাজটি কিন্তু এখন তুমুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এর মাধ্যমে মাসে ৫০০০+ ডলার ইনকাম করতে পারবেন। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ টাকার উপরে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং ও কন্টেন্ট রাইটিং (Content writing and marketing)

হটেস্ট জব হিসাবে খ্যাত এই কন্টেন্ট রাইটিং বা মার্কেটিং এর কাজটির যে কত জনপ্রিয়তা তা আপনাকে বলে বোঝানো আসলে দুঃসাধ্য। শুধুমাত্র একটি আর্টিকেল লিখেই যে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন তার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো এটি। একজন কন্টেন্ট রাইটার বা মার্কেটার মাসে একজন ওয়েব ডেভলপার এর মতোই মাসে ৫০০০ ডলার ইনকাম করতে পারে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (Graphic Design)

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একটি মাত্র লোগো কিংবা ফটো ডিজাইন করেই ১০০ ডলার ইনকাম করতে পারবেন এটি থেকে।গ্রাফিক্স ডিজাইনরা দের ঘণ্টায় আয় প্রায় ৮০ ডলার এর মতো।

কপি রাইটারস (Copy Writing)

একজন অভিজ্ঞ কপি রাইটার খুব সহজেই একটি কাজ থেকেই ২৫০ ডলার কিংবা তারো বেশি আয় করতে পারে। আপনিও শিখতে পারেন কাজটি।

ভিডিও এডিটিং (Video Editing)

ইউটিউব যে এত জনপ্রিয় হচ্ছে তা আপনাকে বলে বোঝানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আর জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ইউটিউবারদের ভালো ভালো কন্টেন্ট বা ভিডিও তৈরি করতে হয়। আর তাই ভিডিও ইডিটিং এর জন্য এখন হাজার হাজার কাজ ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন। নিজের কাজটিও এখানেই খুঁজে নিতে পারেন।

পরিশেষে-

অনলাইন থেকে আপনি কখনোই একটি ফিক্সড অ্যামাউন্ট এর টাকা ইনকাম করতে পারবেন না। আপনার কাজ এর উপর ভিত্তি করেই এর বাড়া কমা হবে বারবার। তবে আপনি যদি খুব ভালোভাবেই লেগে থাকলে আপনাকে আর পিছনে তাকাতে হবে না। আশা করি আপনার জন্য উপরোক্ত আলোচনা কাজে আসবে। আর বাকি কোনো পরামর্শ লাগলে জানাবেন কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 thoughts on “অনলাইনে মাসে কত টাকা আয় করা যায়। (দেখে চমকে যাবেন)”

Scroll to Top