গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কি? : প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব আজ এগিয়ে চলেছে তুমুল গতিতে। মানুষ এর জীবন যাত্রাকেও সহজ করেছে বহুগুণে। সেই বৈশ্বায়নের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই সাফল্য যেন থামার নামই নিচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে। আর এই অগ্রগতির ধারক ও বাহক হিসাবে আমরা দেখতে পাই উন্নত বিশ্বের দেশ সমূহ এর বিভিন্ন নামী দামী প্রতিষ্ঠানকে। ঠিক এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হলো গুগল।
সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে যাত্রা শুরু করা উক্ত প্রতিষ্ঠানটি আজ শুধুই সার্চ ইঞ্জিন এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং মানুষের জীবন যাত্রাকে আরও সহজ করতে তারা এনেছে নানা আবিষ্কার। তারই একটি আবিষ্কার সমন্ধে আজকে আমরা জানব আর তা হলো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। আজকের আলোচনার মূল বিষয় হবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কি? গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ কি? কিভাবে সেটিং করে নিজের ফোনে ব্যবহার করবেন।
চলুন শুরু করা যাক।
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কি?
শুরুতেই আমাদের খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে যে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মূলত কি। কেননা তা না হলে পরবর্তী বিষয় সমন্ধে আমরা পরিষ্কার হবো না। তাই একটু সংজ্ঞার প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মূলত এক প্রকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি গুগল এর ভয়েস কন্ট্রোলড ( Voice Controlled) অ্যাসিস্ট্যান্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে মূলত এক ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি যা কিছুটা মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব অনুযায়ী কাজ করে। বলতে গেলে রোবট কে বোঝানো যেতে পারে।
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বর্তমানে সব ধরনের ডিভাইস যেমন অ্যান্ড্রয়েড, পিসি কিংবা ল্যাপটপেও উপলদ্ধ। তাই আপনি এর যে কোন একটি ব্যবহার কারী হয়ে থাকলে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট চালাতে পারবেন। ভয়েস কমান্ড দিয়ে কথা বলার জন্য গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট একটি কার্যকরী প্রযুক্তি।
Read More:
- ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় ? ইউটিউব থেকে আয়
- অনলাইনে আয় করার আকর্ষণীয় ও সহজ 6 টি পদ্ধতি
- Crypto-currency কি? বিস্তারিত জেনে নিন!!
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতেও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট একটি জনপ্রিয় নাম।
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কি কাজ করে?
আপনি যদি কখনো একা একা অনুভব করেন তাহলে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সাথে কথা বলতে পারেন। হা হা মজা করছিলাম। তবে আপনি এটিও করতে পারেন। যাই হোক গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর যে মূল ব্যবহার গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
১। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কে আপনি যদি যে কোন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন তবে সে তার উত্তর ঝট পট দিয়ে দিবে। এতে করে আপনাকে প্রশ্ন লেখার কষ্ট পোহাতে হবে না। এবং সময়ও বাচবে।
২। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ভয়েস ও টেক্সট উভয় কমান্ডেই কাজ করবে। যা এর একটি অন্যতম ফিচার।
৩। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করলে সার্চ করার সময় আর টাইপ করার কষ্ট করতে হবে না। গুগল এর সাথে কথা বলেই সার্চ করতে পারবেন।
৪। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মাধ্যমে মিউজিক কন্ট্রোল করা যায়। অর্থাৎ আপনি যদি টাচ না করে ফোনে গান চালাতে চান তবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট অন্যতম বিকল্প।
৫। যে কোন অ্যাপ ওপেন বা চালু করার ক্ষেত্রে আপনি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।
৬। আপনার ফোনে এসেছে কয়েকশ মেসেজ বা নোটীফিকেশন এক্ষেত্রে আপনি খুলে খুলে পড়তে পারছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মাধ্যমে নোটিফিকেশন পড়িয়ে নিতে পারবেন।
৭। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মাধ্যমে আপনি এলার্ম এবং টাইম সেট করতে পারবেন খুব সহজেই।
৮। কালকের আবহাওয়া কি হবে, কাল বৃষ্টি হবে কি না, ঝড় হবে কি না, সেই সব আবহাওয়ার খবর জানার ক্ষেত্রে আপনি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
৯। টাইপ করে মেসেজ পাঠানোর কষ্টকে বিদায় দিয়ে আপনি টাইপ না করেই মেসেজ পাঠাতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি যদি কাউকে ফোন না ছুয়েই কল করতে চান তবে আপনি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে পারে আপনার সহায়ক।
এছাড়াও আপনি গান শুনতে চাইলে গুগলে গান শুনতে পারবেন। এছাড়াও আরও অনেক ফিচার বিদ্যমান। আপনি তা সম্পর্কে জানতে পারবেন কেবল ব্যবহার শুরু করলে।
আর সেই ব্যবহার এর পদ্ধতি আমরা জানব নিচের পয়েন্টটিতে।
Read More:
- এড দেখে টাকা ইনকাম করার ওয়েবসাইট – জানুন বিস্তারিত!!
- জিমেইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি কি করব ? সমাধান
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার কমপ্লিট গাইডলাইন
- গুগল কে আবিষ্কার করেন, গুগল এর জনক কে [গুগল সম্পর্কে যত অজানা তথ্য]
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর আগে মূলত গুগল যে কনসেপ্ট লালন করত তা মূলত ছিল গুগল ভয়েস সার্চ। হ্যাঁ, গুগলে কথা বলেই কমান্ড দেয়া যেত এমন একটি ফিচার গুগল এর ছিল। আর এই ফিচার এর একটু বেশি হিসাবে ভাবতেই গিয়েই হয়তো গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর উদ্ভাবন হয়।
২০১১ সালে প্রথম এই গুগল ভয়েস সার্চ আসে এবং তখন তা কেবল পিসি এবং ল্যাপটপেও ছিল যা এখন আমরা আমাদের মোবাইল ফোন গুলোতেও পেয়ে থাকি। এছাড়াও ২০১২ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে গুগল নাউ এর একটি ভার্শন। গুগল নাউ বলতে আলাদা কিছু নয় বরং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর পুরানো ভার্শনটিকেই মূলত গুগল নাউ বলা হয়ে থাকে।
এরপর ধীরে ধীরে যখন প্রযুক্তি আরও অগ্রগতির দিকে যেতে থাকে ঠিক তখন গুগল নাউও আরও উন্নত হতে থাকে। আর এরই একটি ধারায় ২০১৬ সালে আমাদের সামনে চলে আসে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নামক এই কার্যকরী হাতিয়ার যার মাধ্যমে আজ আপনি ভয়েস কমান্ড এর মাধ্যমে অনেক কাজ করে ফেলতে পারবেন।
মোবাইলে কিভাবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সেটিং করবেন?
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মোবাইল এর সাথে উপলদ্ধ হওয়ায় স্মার্টফোনে এটি ব্যবহারে তেমন কোনো কষ্ট পোহাতে হবে না। তবে আপনাকে এর সেটিং ঠিক করে নিতে হবে। আর এ পর্যায়ে আমরা জানব কিভাবে নিজের মোবাইল এ গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সেটিং করবেন। চলুন শুরু করা যাক।
১। সবার প্রথমে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলো নিজের স্মার্টফোন এর মধ্যে থাকা গুগল অ্যাপটি ওপেন করুন। ক্রোমা ব্রাউজার নয় গুগল এর মেইন অ্যাপটি ওপেন করুন।
২। এরপর আপনি যে ভাবে ফোনটিকে ধরে রেখেছেন সেই হিসাবে আপনার হাতের ডান পার্শ্বের More অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৩। মোর অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি চলে যান সেটিংস অপশনটিতে। সেটিংস এ থাকা মোর অপশনে থাকা সেটিংস এ পর্যায়ে আপনার কাজ করতে হবে।
৪। সেটিংস অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি এবার চলে যান গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট( Google Assistant) অপশনটিতে। এই সেই কাঙ্ক্ষিত গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট।
৫। এ পর্যায়ে আপনি ক্লিক করার পর চলে আসুন আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্যাবে।
৬। অ্যাসিস্ট্যান্ট অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি চলে আসুন একেবারে নিচে। সেখানে আপনি দেখতে পারবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইস এর নিচে থাকা ফোন অপশন। Phone অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৭। ফোন অপশন এ ক্লিক করার পর আপনি আরেকটি পেজে চলে আসবেন। এ পর্যায়ে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো সবথেকে উপরে আপনি দেখতে পারবেন Google Assistant অপশনটি। আপনার কাজ এর সাথেই। Google Assistant এই অপশনটিকে এই পর্যায়ে সক্রিয় বা ইনেবল করে দিন।
৮। সর্বশেষে আপনাকে এবার যা করতে হবে তা হলো ভয়েস ম্যাচ এর নিচে থাকা Hey google অপশনটিতে ক্লিক করে সক্রিয় করে দিন। এতেই শেষ।
এর মাধ্যমে আপনার গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে চালু করতে সক্ষম হবেন এবং একবার যখন চালু হয়ে যাবে তখন আপনাকে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।
আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা মূলত জানলাম গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। সেই সাথে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সুবিধা আপনি নিজের ফোনে নিতে পারবেন কিনা, সে সমন্ধেও জেনেছি।
আশা করছি যে এর মাধ্যমে আপনার কাছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কনসেপ্ট বা ধারণাটুকু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এরকমই প্রযুক্তি রিলেটেড পোস্ট পেতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। এবং পরবর্তী পোস্ট এর জন্য ব্লগটিকে সাবস্ক্রাইব করুন। ধন্যবাদ।