ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় ? ইউটিউব থেকে আয়

ইউটিউবিং বর্তমানে বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় পেশা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশেষ করে তরুণেরা ইউটিউব এর প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট। ইউটিউবিং জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ইউটিউবারদের মধ্যে কিছু সাধারণ প্রশ্নও জেগে উঠেছে। যেমনঃ ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় ? ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করা সম্ভব? ইউটিউব মনিটাইজেশন কি? এসইও কি? ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা তোলা সম্ভব? ইত্যাদি প্রশ্নগুলো অন্যতম।

সাধারণত যারা নতুন ইউটিউবিং শুরু করেছেন এবং ইউটিউবিং শুরু করার কথা ভাবছেন তাদের মধ্যে এই প্রশ্নটি বেশি উঁকি দেয় যে ইউটিউব থেকে প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা আয় করা যায়। এ প্রশ্নগুলো কারো মনে আসা তেমন অমূলক নয়। কারণ আপনি যে জায়গাতে কাজ করবেন সেখান থেকে কত টাকা পাবেন সেটা জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

তা না হলে দেখা যাবে আপনি ইউটিউবিং শুরু করার পরে, মধ্য পথে গিয়ে উদ্যম হারাবেন। শেষমেষ ইউটিউব থেকে টাকা আয় না করতে পেরে কাজটি ছেড়ে দিবেন। তাই এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব ইউটিউব থেকে প্রতি 1000 ভিউতে কত টাকা পাওয়া সম্ভব, কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন বাড়ানো যায় এবং ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায়গুলো কি কি সেই বিষয়গুলো নিয়ে।

তাই এই পোষ্টের সকল আলোচনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় সেই ধারণা আপনার স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়
ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়

তো চলুন শুরু করা যাক!

Table of Contents

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়

ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য চ্যানেলের View মূল বিষয় নয়। ইউটিউব অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে মূলত বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে। ইউটিউব বিভিন্ন ধরনের জটিল হিসাব নিকাশ এর মাধ্যমে ইউটিউবারদের কে টাকা প্রদান করে থাকে। এই হিসাব নিকাশ গুলোর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞাপন গুলোর CPC, CTR এবং RPM ইত্যাদি।

ইউটিউব থেকে আয় বলতে মূলত ইউটিউবের বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে প্রাপ্ত আয়কে বুঝায়। অর্থাৎ আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে বিজ্ঞাপন দাতারা বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করবে। এর ফলে আপনি তাদের কাছ থেকে টাকা পাবেন। সহজ কথায়, আপনার চ্যানেলের ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে,  মাঝামাঝিতে বা বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপন দেখাবে, এর বিনিময়ে আপনি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করবেন।

একারণেই ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় কিংবা ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা দেয় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর এর আগে আমাদেরকে কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় জেনে নিতে হবে।

এছাড়াও নিম্নোক্ত উপায়ে আপনার ইউটিব চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করতে পারেন। যেমনঃ

  • মেম্বারশিপ চালু করা
  • সুপার চ্যাট
  • পণ্য বিক্রি
  • ইউটিউব প্রিমিয়াম ইত্যাদি ।

এই উপায়গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা রোজগার করা সম্ভব।

আরও পড়ুন:

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার উপায়

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য আপনার প্রথমত দুইটি জিনিষ দরকার। এগুলো হলো, একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এবং একটি কম্পিউটার। শুধুমাত্র এই দুইটি জিনিষ দিয়েই আপনি ইউটিউব থেকে টাকা আয় শুরু করতে পারেন।

তাছাড়া শুধুমাত্র ইউটিউব ভিডিও দেখেও আপনি ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে প্রথমত একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। এরপর চ্যানেলটিকে ইউটিউব মনিটাইজেশন এর আওতায় নিয়ে আসার জন্য আবেদন করতে হবে। তবে বর্তমানে প্রতি মিনিটে ইউটিউবে চারশোরও বেশি ভিডিও আপলোড হয়।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রতিযোগিতা কত বেশি তীব্র।

ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম

ইউটিউব চ্যানেল খোলা বর্তমানে অনেক সহজ একটি ব্যাপার। এখানে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম দিয়ে দিচ্ছি। ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য শুধুমাত্র একটি নিজস্ব জিমেইল একাউন্ট ও প্রাথমিক কিছু তথ্য পূরন করাই যথেষ্ট। জিমেইল একাউন্ট খুলতে সাধারনত নাম, ফোন নাম্বার,  বয়স, লিঙ্গ ও ছবি এসব তথ্যের প্রয়োজন হয়৷

এইকটি নমুনা ইউটিউব চ্যানেল

ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম। ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় । ইউটিউব থেকে আয়
ইউটিউব থেকে আয়

আপনার জিমেইল একাউন্ট লিখে, পাসওয়ার্ড লিখতে হবে। এরপর ইউটিউবে প্রবেশ করে আপনি প্রোফাইলে গিয়ে Create a Channel এ ক্লিক করে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল তৈরী করতে পারবেন। ইউটিউব চ্যানেল খোলার এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ন বিনামূল্যের একটি সেবা।

আরও পড়ুন: ব্লগিং করে অনলাইনে আয় করার উপায়।

ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম

কিভাবে ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হবেন

ইউটিউব পার্টনাশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করলে আপনার পক্ষে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব নয়। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে হবে।

ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে-

  1.  আপনার ইউটিউব চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
  2.  সর্বশেষ ১২ মাসে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটির ভিডিও গুলোতে কমপক্ষে ৪ হাজার ঘন্টা ভিউ থাকতে হবে।
  3.  আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করতে হবে।

উপরোক্ত শর্তগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলেই আপনি ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।

ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন কি

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য শুধুমাত্র চ্যানেল খোলাই যথেষ্ট নয়৷ আপনাকে অবশ্যই ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হবে। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার সিস্টেমকে অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনও বলে। ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বসানো এবং বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।

ইউটিউব মনিটাইজেশন এর পদ্ধতি কি

২০১৯ সালের আগে ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনের কোনো নীতিমালা ছিলনা৷ তবে ২০১৯ সালে ইউটিউবের করা নিয়ম অনুযায়ী ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন চালু করার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-

  1. ইউটিউবে Sign In করতে হবে।
  2. আপনার Profile এ ঢুকে Creator Studio তে প্রবেশ করতে হবে।
  3. এরপর আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি সিলেক্ট করে Status and feature এ ক্লিক করতে হবে।
  4. Monetization লেখাটি দেখতে পেলে সেটি Enable করে দিতে হবে।
  5. সর্বশেষে Confirm এ ক্লিক করে বের হয়ে আসতে হবে।

পরবর্তীতে Google AdSense Team আবেদন যাচাই করার পর সেই চ্যানেলটি মনিটাইজ করার মত উপযুক্ত মনে করলে বা ভালোমানের ভিডিও থাকলে তখন চ্যানেলটির জন্য গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন করে। অনুমোদন পাওয়ার পর সেই ইউটিউব চ্যানেলটিতে যখন কেউ ভিডিও দেখে তখন ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হতে থাকে। তখন থেকে বিজ্ঞাপন ভিউ হিসাব করে সাধারণত ইউটিউব একজন ইউটিউবারকে টাকা দিয়ে থাকে।

এছাড়া একজন জনপ্রিয় ইউটিবার আরো কিছু উপায় হতে টাকা আয় করতে পারেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ইউটিউবে কত ভিউ হওয়ার পর আয় শুরু করা যায়

এই পোস্ট এর পূর্বের অংশেও বলা হয়েছে যে, 2019 সালের পূর্বে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য ভিউ এর সময় নির্দিষ্ট ছিল না। তবে 2019 সালের গুগল এডসেন্স নিয়ম অনুযায়ী কোন চ্যানেল মনিটাইজেশন এর জন্য চ্যানেলটি তে কমপক্ষে 1000 সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। এর সঙ্গে সেই ইউটিউব চ্যানেলটিতে সর্বশেষ এক বছরে কমপক্ষে 4000 ঘন্টা ভিউ থাকতে হবে।

তাই সর্বশেষ ১২ মাসে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে 4000 ঘন্টা ভিউ থাকলেই আপনি গুগল থেকে টাকা আয় করা শুরু করতে পারবেন।

ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়লে কি আয় বাড়ে

ইউটিউব ভিডিও দেখার সময় আমরা প্রায়ই বলতে শুনি আমাদের চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন অথবা বেল বাটন টি তে ক্লিক করুন। এটি থেকে আমরা ধারণা করি যে সাবস্ক্রাইবার বাড়লে হয়তো চ্যানেলটিকে ইউটিউব টাকা প্রদান করে থাকে৷ কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি সঠিক নয়।

সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যার সঙ্গে চ্যানেলের ইউটিউব থেকে টাকা আয় বাড়ার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বৃদ্ধির মানে হচ্ছে চ্যানেলটি অত্যন্ত বেশি জনপ্রিয় হওয়া। আর কোনো চ্যানেল যত বেশি জনপ্রিয় হবে তত বেশি মানুষের কাছে চ্যানেলটির ভিডিও প্রচার সংখ্যা বাড়বে। চ্যানেলটির জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে চ্যানেলের Viewer সংখ্যাও বাড়বে।

ফলে Google AdSense কে সেই চ্যানেলটির ভিডিও ততবেশি আকর্ষণ করবে। ইউটিউব তখন থেকে সেই চ্যানেলে অধিক পরিমানে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। এই বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বাড়লেই কেবল চ্যানেলটিতে ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের পরিমান বাড়বে। সুতরাং সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা এক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখেনা। তবে পরোক্ষভাবে চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়লে ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের পরিমাণও বেড়ে যায়।

ইউটিউব প্রতি ভিউতে কত টাকা দেয়

ইউটিউব সাধারণত কোনো চ্যানেলের View হিসাব করে কাউকে অর্থ প্রদান করেনা। কোনো চ্যানেলের ভিডিও দেখার সময় কি পরিমানে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে এবং সেগুলোতে দর্শকেরা কি পরিমানে ক্লিক করছে সেটির উপরে হিসাব করে ইউটিউব থেকে অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।

তাছাড়া দর্শকেরা কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন কতক্ষণ দেখছে এবং কতটুকু দেখার পর স্কিপ করছে সেটি সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাব করে ইউটিউব থেকে টাকা আয় হয়ে থাকে।

সেই সাথে একটি চ্যানেলের ভিডিওতে কি পরিমান বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, বিজ্ঞাপনগুলোর ক্লিক রেট কত হবে এবং বিজ্ঞাপন ভিউ রেট কত হবে ইত্যাদি বিবেচনা করে সাধারণত ইউটিউব একজন ইউটিউবারকে টাকা প্রদান করে থাকে।

ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেলে ভিডিও দেখার সময় আমরা লক্ষ্য করি যে কিছু চ্যানেলে অতিরিক্ত পরিমাণে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। আবার দেখি যে কিছু চ্যানেলে কোন বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় না । এই বিষয়টি থেকে আমরা বুঝতে পারব যে , চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এর উপর ইউটিউবের বিজ্ঞাপন নির্ভর করেনা। বিজ্ঞাপন নির্ভর করে নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাক্টর এর উপর।

এই ফ্যাক্টর গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিডিওটির বিষয়বস্তু কি , ভিডিওটিতে কোন কোন কিওয়ার্ড রয়েছে, ভিডিওটি কি সম্পর্কিত , চ্যানেলটির মান কেমন এবং কোন কোন দেশ থেকে ভিডিওটি দেখা হচ্ছে এগুলোর উপর। এই সবকিছু বিবেচনা করে ইউটিউব কোন নির্দিষ্ট ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকে।

সাধারণত শেয়ার মার্কেট, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং টেকনোলজি নির্ভর ইউটিউব চ্যানেল গুলোতে বিজ্ঞাপন প্রদানের হার বেশি হয়ে থাকে । কারন এগুলোতে অনেক বেশি দামি বিজ্ঞাপন প্রদান করা হয়। যার ফলে এই ধরনের চ্যানেলগুলো থেকে বেশি পরিমানে আয় হয়ে থাকে ।

অপরদিকে শিক্ষা বিষয়ক চ্যানেলগুলোতে আয় তুলনামূলক কম থাকে। কারণ এই চ্যানেলগুলোর দর্শকেরা সাধারণত 18 বছরের কম বয়সি হয়ে থাকেন। ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হন না।

সুতরাং ইউটিউব কত ভিউতে কত টাকা দেয়, কিংবা ইউটিউব থেকে প্রতি 1000 ভিউতে কত টাকা পাওয়া সম্ভব এটি সরাসরি বলা সম্ভব নয়। আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও গুলোর কিওয়ার্ড এবং ভিডিওগুলোর ধরন অনুযায়ী নির্ভর করে ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের পরিমান কম বেশি হতে পারে।

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার হিসাব

এই পোষ্টের পূর্বের অংশ পড়ে থাকলে আপনারা ইতোমধ্যেই জেনে গেছেন যে, ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার হিসাব সঠিকভাবে বলা যায় না। কারণ ইউটিউব একই ভিডিওতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে ।

তাই কোন ভিডিওতে যদি 1000 ভিউতে 500 টি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হয়ে থাকে তবে সেটি থেকে প্রায় 5 থেকে 6 ডলার ইনকাম করা সম্ভব। আবার কোনো চ্যানেলের ভিডিওতে 1000 ভিউতে যদি 50 টি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হয়ে থাকে তবে সেটি থেকে এক ডলারের কম আয় আসবে।

অন্যদিকে, ধরা যাক কোনো চ্যানেলের ভিডিওর 1000 ভিউ এর কোন ভিডিওতে একটিও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয়নি। ফলে এই ভিডিও থেকে কোন আয় আসবেনা। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমনঃ কিছু কিছু ভিডিওতে দেখা যায় 1000 ভিউ হওয়ার পর মাত্র 20 থেকে 30 টি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়েছে। এই ভিডিওগুলো থেকে তার পরেও তিন থেকে চার ডলার আয় হয়েছে।

এটির কারণ হচ্ছে, এই চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে View হয়েছে কিছু উন্নত দেশ থেকে। যেমনঃ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি। এই দেশগুলোতে বিজ্ঞাপনের অর্থের হার অনেক বেশি থাকে।

ফলে কম বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করলেও এগুলো থেকে বেশি ইনকাম করা সম্ভব। এছাড়া ইউটিউব ভিডিওতে প্রদর্শিত হওয়া বিজ্ঞাপনে অর্গানিক ক্লিক বেশি হলে অল্প বিজ্ঞাপন শো করেও বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হয়। নরমালি ভিডিওতে ২০%-৩০% বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

ইউটিউব মূলত CPC, CTR ও RPM সহ আরো কিছু বিষয় বিবেচনা করা টাকা প্রদান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নিখুত হিসাব মিলানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং, ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়, কিংবা ইউটিউব প্রতি ভিউতে কত টাকা দেয় সেটির সুনির্দিষ্ট হিসাব করা কঠিন।

Google AdSense CPM কি

ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে ইউটিউবের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে ৷ এগুলোর মধ্যে CPM (Cost per Miles) এবং CPC (Cost Per Click) অন্যতম। CPM কে অনেকে বলেন থাউস্যান্ডের হার। ইউটিউবারদের CPM রেট বিভিন্ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠানামা করে।

ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়, কিওয়ার্ড ও ভিউয়ার গ্রুপের ভিন্নতার কারনেও CPM রেট এর তারতম্য হয়। সাধারণত  বিজ্ঞান প্রযুক্তি, শেয়ার মার্কেট ইত্যাদি ভিত্তিক চ্যানেলগুলির CPM রেট সব থেকে বেশি। আবার ভারতীয় ভিউয়ার, আমেরিকান ভিউয়ার ও বাংলাদেশী ভিউয়ারদের মধ্যে আমেরিকান ভিউয়ার বেশি হলে ইউটিউব থেকে তুলনামূলক বেশি অর্থ আয় করা সম্ভব।

অন্যদিকে শিক্ষা ভিত্তিক ও শিশুদের বিভিন্ন চ্যানেলগুলির CPM সাধারণত অনেক কম হয়ে থাকে। কারণ, এসব চ্যানেলের ভিউয়াররা মূলত ১৮ বছরের কম বয়সী। ১৮ বছরের নিচের বয়সের দর্শকদের প্রতি বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। এসব চ্যানেলের সিপিএম (CPM) রেট সাধারণত ২ ডলারে মধ্যেই থাকে।

Google AdSense CPC কি

CPM এর মতো CPC অর্থাৎ Cost Per Click-তে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের লিংকে ক্লিক করলে তার পরিবর্তে টাকা পাওয়ার পদ্ধতিকে বুঝায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে CPM এর রেট কম বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ এমনকি অঞ্চল ভেদেও CPC রেট উঠানামা করতে পারে।

Google AdSense CPM ও CPC রেট কোন দেশে বেশি

কোন কোন দেশে এ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপনের ক্লিক রেট বেশি সেটি নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব। গুগলের তথ্যমতে নিম্নোক্ত ৫ টি দেশের ক্লিক রেটের হার সর্বোচ্চ।

  1. আমেরিকা – ০.৬১
  2. অস্ট্রেলিয়া – ০.৫৭
  3. ইংল্যান্ড- ০.৪৮
  4. ফিনল্যান্ড – ০.৪৫
  5. কানাডা – ০.৪৫

উন্নত দেশগুলো বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য গুগলের কাছে অত্যধিক পরিমানে টাকা পরিশোধ করে থাকে।একারনেই সাধারণত উন্নত দেশের বিজ্ঞাপনগুলোতে ক্লিক রেট বেশি হয়ে থাকে। তাই Google Adsense এর বিজ্ঞাপন উন্নত দেশে প্রদর্শিত হলে সেই দেশের ক্লিক রেটও অনেক বেশি থাকে। অপরদিকে স্বল্প উন্নত দেশগুলো বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম টাকা খরচ করে বিধায় ঐ দেশগুলোর Google Adsense বিজ্ঞাপন রেট তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়।

ইউটিউব থেকে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা আয় করতে পারবেন

ইউটিউব থেকে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত টাকা আয় করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট নয়। এটি মূলত নির্ভর করবে আপনার ভিউয়ার, সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা, দর্শকদের সাথে আপনার চ্যানেলের ইন্টারেকশন কেমন এমন কিছু ফ্যাক্টরের মাধ্যমে।

বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো হচ্ছে-

  1. Ryan Kaji – 26 মিলিয়ন ডলার (প্রোডাক্ট রিভিউ নির্ভর চ্যানেল )
  2. Dude Perfect – 20 মিলিয়ন ডলার (গেমিং নির্ভর চ্যানেল )
  3. Anastasia Radzinskaya – 18 মিলিয়ন ডলার (কমেডি নির্ভর চ্যানেল)
  4. Rhett and Link – 17.5 মিলিয়ন ডলার (কমেডি নির্ভর চ্যানেল)
  5. Jeffree Start – 17 মিলিয়ন ডলার (লাইফ স্টাইল এবং মেকআপ নির্ভর চ্যানেল)
  6. Preston – 14 মিলিয়ন ডলার (গেমিং নির্ভর চ্যানেল)
  7. Markiplier – 13 মিলিয়ন ডলার (ভিডিও গেমিং নির্ভর চ্যানেল)।
  8. PewDiePie – 13 মিলিয়ন ডলার (ভিডিও গেমিং এবং কমেডি নির্ভর চ্যানেল)
  9. Dan TDM – 12 million (গেমিং নির্ভর চ্যানেল )

এছাড়া বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেলগুলোও বর্তমানে ইউটিউব থেকে অনেক বেশি টাকা উপার্জন করছে। তাই সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চ্যানেল পরিচালনা করলে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করে সমৃদ্ধ হওয়া সম্ভব। তাই শুধুমাত্র কিছু টেকনিক ব্যবহার করলে আপনি ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

ইউটিউব থেকে আয় বাড়ানোর নতুন কিছু কৌশল

এই লেখাটির পূর্বের অংশ থেকেই আমরা ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করতে পারব সে সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ধারনা পেয়ে গেছি। এখন ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কি কি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে জানব।

ইউটিউব ভিডিওতে SEO টেকনিক ব্যবহার করতে হবে

গুগলসহ বিভিন৷ সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইট প্রোমোট করার টেকনিককে SEO বলা হয়। SEO টেকনিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ভিডিওটি ইউটিউবে সার্চকৃত ফলাফলগুলোর মধ্যে শুরুর দিকে জায়গা করে নেবে। ফলে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি পরিমানে ভিউয়ার আপনার ভিডিওটি দেখতে পারবে। এতে আপনার ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

সফলভাবে শেও টেকনিক প্রয়োগ এর ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  1.  ভিডিওতে সুনির্দিষ্ট কিছু কিওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করা।
  2. ভিডিওর ডেসক্রিপশনে নির্দিষ্ট কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা।
  3.  সকল ধরনের ভিউয়ার সার্চ করবে এমন কিছু কমন শব্দ  শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

Read More: ইউটিউব ভিডিও এসইও কি? ভিডিও র‌্যাংক করানোর 100% কার্যকরি কৌশল

ইউটিউব চ্যানেলের জন্য মানসম্মত ভিডিও তৈরী করা

ভিউয়ার বাড়ানোর জন্য আপনাকে নিয়মিতভাবেই মানসম্মত ভিডিও তৈরী করতে হবে। ভিডিওর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাল মানের ভিডিও তৈরী করতে না পারলে ভিউয়াররা আপনার চ্যানেল দেখতে আগ্রহী হবে না। তাই ইউটিউব থেকে বেশি আয় করতে হলে ভাল কন্টেন্ট নির্মান করতে হবে।

ইউটিউব নীতিমালা মেনে ভিডিও তৈরি করা

ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে ইউটিউবের নীতিমালা গুলো জেনে রাখা আপনার জন্য অনেক বেশি জরুরি। কারন, নীতিবিরুদ্ধ কোনো ভিডিও আপনার চ্যানেলে প্রচার করা হলে ইউটিউব আপনার চ্যানেলটিকে বন্ধ করে দিতে পারে। তাই ভিডিও আপ্লোড দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই সেটি ইউটিউবের নীতিবিরোধী কিনা সেটি পরীক্ষা করতে হবে। তা না হলে, ইউটিউব থেকে অর্থ আয় করা কঠিন হয়ে যাবে।

ইউটউবের ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা

ইউটিউবের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। ইউটিউব চ্যানেলে কোনো ভিডিও আপলোড করার পর সেটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম যেমন-ফেইসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি সাইটগুলোতে ভিডিওটি শেয়ার করতে পারেন। এতে অনেক বেশি পরিমাণে ভিউয়ার ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে আপনার ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ বেড়ে যাবে।

ইউটিউব থেকে আয় করে কিভাবে টাকা তোলা যায়?

ইউটিউব থেকে সরাসরি টাকা তোলার কোনো পদ্ধতি নেই৷ অর্থাৎ ইউটিউব কাউকে সরাসসরি টাকা প্রদান করেনা। সার্চ ইঞ্জিন Google তাদের Google Adsense এর মাধ্যমে সাধারনণত চ্যানেলগুলোকে টাকা প্রদান করে থাকে। আপনার চ্যানেল মনিটাইজেশন সম্পন্ন হলে ইউটিউবের পক্ষ থেকে প্রতি মাসের ১০ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে আপনার Google Adsense অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। আপনার Google Adsense একাউন্টে১০ ডলার পরিমাণ টাকা জমা হলে গুগল আপনার ঠিকানায় চিঠির মাধ্যমে গোপন কোডসহ একটি চিঠি পাঠাবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকে সেই কোডটি ভেরিফাই করে নিতে হবে। পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১০০ ডলার হলে গুগল আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইউটিউব থেকে অর্জিত টাকা পাঠিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে পূর্বেই ব্যাংক একাউন্ট প্রদান করতে হবে।

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় , ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়

পরিশেষে

ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় কিংবা ইউটিউব থেকে প্রতি ভিউতে কত টাকা আয় করা সম্ভব এটি স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। কেউ প্রতি ১০০০ ভিউতে ১০ ডলার, কেউ ৫ ডলার, কেউ ২ ডলার আবার কেউ মাত্র ৫ সেন্ট ইনকাম করছে।

উপরের আলোচনা থেকে আশা করি এটি বুঝতে পেরেছেন যে, ইউটিউবে চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার জন্য বা ভিডিও ভিউ এর ক্ষেত্রে টাকা দেয় না। ইউটিউব এ মনিটাইজ করা ভিডিওতে যখন গুগল এ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন শো হয় তখন ইউটিউব বিজ্ঞাপন ভিউ ও বিজ্ঞাপন ক্লিক হিসাব করে টাকা দিয়ে থাকে।

তাই ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় অর্থা ৎ আপনি টাকা পাবেন সেটি নির্ভর করবে আপনার চ্যানেলের মানের উপর। ইউটিউবিং যদি আপনার পেশা হয়ে থাকে তবে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন আপনাকে ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়।

বন্ধুরা লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 thoughts on “ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয় ? ইউটিউব থেকে আয়”

  1. Milton Choudhury

    আমার RPM CPM থেকে বেশি। RPM 29 এবং CPM 26 এখন কি করবো। কি সমস্যা হবে ? আমাকে বলুন দয়া করে।

Scroll to Top