বর্তমানে মানুষ তাদের ব্যবসা কে প্রচার প্রসার করার জন্যে অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্য নিচ্ছেন। এতে করে তাদের ব্যবসার জন্য খুবই লাভবান হচ্ছেন। আবার অনেকেই অনলাইনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এবং ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে। রাতারাতি রোজগার লক্ষ লক্ষ টাকা। অনলাইনে আয় করার মাধ্যমগুলোর মধ্যে থেকে আজকে আমি আলোচনা করছি ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে। অনলাইনে কমার্স ব্যবসা করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতিমাসে রোজগার করা অতি সাধারণ একটি ব্যাপার।
যে কেউ চাইলেই অনলাইনে তাদের ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে সেটা থেকে প্রতি মাসে প্রচুর পরিমাণে অর্থ লাভ করতে পারেন। ই কমার্স নিয়ে এর যাবতীয় তথ্য থাকবে আমাদের আজকের এই টিউটোরিয়াল। এবং থাকবে কিভাবে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে হয়, কি কি জানার প্রয়োজন এবং কিভাবে মার্কেটিং করতে হয় সকল খুঁটিনাটি।
ই-কমার্স ব্যবসা কি
প্রথমে জেনে নিচ্ছি ই-কমার্স ব্যবসা কি বা কিভাবে কাজ করে। সহজ ভাষায় ই-কমার্স ব্যবসা হল অনলাইন ভিত্তিক একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে আপনার ওয়েবসাইট/অনলাইল ষ্টোর থাকবে এবং কাস্টমাররা অনলাইনে ওয়েবসাইটে পন্য অর্ডার করবে। ওয়েবসাইট ওনার বা মালিক সে প্রডাক্ট কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেবে। অর্থাৎ যেকোনো পণ্য অনলাইনে বিক্রয় করার মাধ্যমটি হলো ই-কমার্স ব্যবসা।
কীভাবে শুরু করব
একটা ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আমি নিম্নে কিছু নমুনা দিয়ে দিচ্ছি এই অনুযায়ী একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করলে সেখান থেকে অবশ্যই লাভবান হতে পারবেন।
আরোও পড়ুনঃ অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায়।
ই-কমার্স ব্যবসার প্রয়োজনীয় কিছু স্টেপঃ
ওয়েবসাইট তৈরিঃ ই-কমার্স ব্যবসা করার জন্য আপনি যে রিলেটেড পণ্য বিক্রয় করবেন সেই রিলেটেড একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এবং ওয়েবসাইটটি অবশ্যই professional-looking হতে হবে।
প্রডাক্ট লিস্টিংঃ আপনি যে সকল পণ্য ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে বিক্রয় করতে চান সেই সকল পণ্য ছবিসহ ওয়েবসাইটে লিস্টিং করতে হবে। এবং কাস্টমাররা যাতে খুব সহজেই অনলাইন থেকে অর্ডার করতে পারে সেজন্য খুব সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস/ সহজ নেভিগেশন তৈরি করতে হবে। যেন একজন কাস্টমার খুব সহজেই সেখানে অর্ডার করতে পারে।
পণ্যের মূল্য নির্ধারণঃ আপনি যে পন্যটি বিক্রয় করতে চাচ্ছেন সে পণ্যটি মার্কেটে কেমন প্রাইস রয়েছে সেদিকে খেয়াল রেখে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে যাতে করে একজন কাস্টোমার মূল্য দেখে খুব সহজেই আপনার পণ্যটি কেনার জন্য আগ্রহী হয়।
পেমেন্ট সিস্টেমঃ আপনি যে দেশে বা যে এরিয়াকে টার্গেট করে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেই এরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন পেমেন্ট সিষ্টেম অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট এর ব্যবস্থা চালু রাখা। যাতে একজন কাস্টমার খুব সহজেই একটি পণ্যের পেমেন্ট দিতে পারে।
ডেলিভারি সিস্টেমঃ পণ্যটি কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর যথাযোগ্য বিশ্বস্ত ডেলিভারি সিস্টেম চালু রাখা। যাতে একজন কাস্টোমার একটি পণ্য কেনার পর খুব দ্রুত বা খুব সহজে পনেরোটি তার হাতে পেতে পারে। যদি ডেলিভারি সিস্টেম ভালো না থাকে বা কাস্টমারের বিশ্বস্ত না হয় তাহলে সে সকল ই-কমার্স ওয়েবসাইট একজন কাস্টোমার একটি পণ্য অর্ডার করতে উৎসাহী হবে না।
গ্যারান্টি: আপনি যে পন্যটি বিক্রি করছেন সে পণ্যের গুণগত মান এবং গ্যারান্টির ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তারপর একটি পণ্য ই কমার্স ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি করা উচিত। তাহলে একজন কাস্টোমার একাধিক পণ্য বারবার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে। আর যদি পণ্যের কোন গ্যারান্টি বা গুণগত মান ঠিক না থাকে সে ক্ষেত্রে একজন কাস্টোমার একবার একটি পণ্য কেনার পর আপনাকে খারাপ রিপোর্ট করবে। সে ক্ষেত্রে সেই কাস্টমার ছাড়াও আরও অনেক কাস্টমার নষ্ট হয়ে যাবে।
রিফান্ড পলিসিঃ একটি ই-কমার্স ব্যবসার জন্য অবশ্যই রিফান্ড পলিসি রাখতে হবে। যাতে কোন ইউজার একটি পণ্য অর্ডার করার পর তার মন মত না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সে পণ্যটি ফেরত দিয়ে তার টাকা ফেরত নিতে পারবে এমন সিস্টেম অবশ্যই রাখতে হবে। অথবা ইউজার যে পণ্যটি অর্ডার করেছে সে পণ্যটি তার চাহিদার মধ্যে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সেক্ষেত্রে তাকে যত দ্রুত সম্ভব নোটিশ করে টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে।
ষ্টোর/ষ্টোকঃ আপনি যেখান থেকে পণ্য ডেলিভারি করবেন সেখানে একটি স্টোর করতে হবে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের স্টক রাখতে হবে। কাস্টমার অর্ডার করার পর যদি আপনার স্টরে যথাযথ স্টক না থাকে তাহলে আপনি ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হবেন সে ক্ষেত্রে আপনার ই-কমার্স ব্যবসার অবনতি হতে পারে।
প্রোডাক্ট ক্যাটাগরিঃ ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রোডাক্ট গুলো অবশ্যই রিচার্জ করে বা যুগোপযোগী ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট রাখতে হবে যে সকল প্রোডাক্ট মানুষ অনলাইনে অর্ডার করতে অভ্যস্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ই-কমার্স ব্যবসার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি হলো, এলেক্ট্রনিকস প্রোডাক্ট, ফ্যাশন প্রোডাক্ট, গার্মেন্টস প্রোডাক্ট, বেবী প্রোডাক্ট, কিচেন প্রোডাক্ট, ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে পারেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ আপনার ওয়েবসাইটের অবশ্যই কাস্টমারের যোগাযোগ করার অপশন রাখতে হবে যেন কাস্টমার কোন সমস্যা বা যেকোন পরামর্শের জন্য যেকোনো সময় আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। সেজন্য Contact Us একটা পেজ তৈরি করে সেখানে Contact Form, e-mail অ্যাড্রেস এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে দিতে পারেন। এতে করে কাস্টমারের ট্রাস্ট বেড়ে যাবে।
আরোও পড়ুনঃ আর্টিকেল লিখে অনলাইনে আয় করুন বিকাশে পেমেন্ট নিন।
কেমন পুজি লাগবে
একটি ই-কমার্স ব্যবসা চালু করতে কত টাকা ইনভেস্ট করতে হয় এটা আসলে নির্ভর করবে আপনি কোন এরিয়াতে, বা কি ধরনের কাস্টমার টার্গেট করে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করছেন। এবং আপনার প্রোডাক্টের মূল্য কেমন তার উপর নির্ভর করবে আপনার ইনভেস্টমেন্ট।
একটি ই-কমার্স ব্যবসার জন্য কয়েকটি সেক্টরে আপনাকে ইনভেস্ট করতে হবে। তা হলঃ ওয়েবসাইট তৈরিতে ইনভেস্টমেন্ট, ষ্টোর ভাড়া, ষ্টোক মালামাল মার্কেটিং, ওয়ার্কার/ডেভেলপার বেতন, অনলাইনে প্রমোট ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো আপনি নিজে মেইনটেন করতে পারবেন, সেগুলোর জন্য কোন প্রকার ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন নেই, যেমন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, প্রডাক্ট আপডেট, ডেলিভারি প্রসেসিং, কাস্টমার সাপোর্ট ইত্যাদি।
কোথায় মার্কেটিং করবেন
ই-কমার্স ব্যবসার মার্কেটিং কোথায় করতে হয়। একটি ই-কমার্স ব্যবসার জন্য মার্কেটিং এর সবচেয়ে ভালো জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন প্রমোট, অনলাইন বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন জায়গায় স্পন্সর হিসেবে আপনার পণ্যের রিভিউ দিতে পারেন।
এবং এই মার্কেটিং গুলো দুই ভাবে করা যায় একটা হচ্ছে ফ্রি মেথড এবং অন্যটি পেইড মেথড।
ফ্রি মেথডঃ আপনি যদি ফ্রি মেথডে মার্কেটিং করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে এবং অনেক কম অডিয়েন্স পাবেন। ফ্রি মার্কেটিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হল, ফেসবুক, ইমেইল মার্কেটিং, মেসেঞ্জার মার্কেটিং, ব্লগ ইত্যাদি।
পেইড মেথডঃ আপনার পণ্যের মার্কেটিং এর জন্য বিড মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পেমেন্ট করতে হবে। ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স ব্যবসার প্রচার-প্রচারণার জনপ্রিয় মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম গুলো হল, ফেসবুক বোষ্ট, ইমেইল মার্কেটিং, গেস্ট, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
কেমন প্রফিট হবে
একটি ই-কমার্স ব্যবসার নির্ভর করে আপনার কি পরিমাণে পণ্য বিক্রয় হচ্ছে এবং প্রতিটি পণ্য থেকে কি পরিমাণে লাভ হচ্ছে তার উপর।
মনে করুন আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে প্রতিদিন 200 প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে, প্রতিটি প্রোডাক্ট থেকে আপনার 50 টাকা করে লাভ হল তাহলে আপনার লাভ হবে 50*100= 5000 টাকা। এবং মাস শেষে লাভ দাঁড়াবে 5000*30= 150,000 টাকা। এবার সেখান থেকে যদি আপনার মার্কেটিং খরচ, কর্মচারী বেতন, অফিস ভাড়া ইত্যাদি 50000 টাকা বাদ দিন তাহলে প্রফিট থাকবে 100000 (একলক্ষ টাকা) টাকা।
এটা শুধুমাত্র দেখালাম যদি প্রতিদিন 100 প্রোডাক্ট বিক্রি হয়। একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট যদি ভালোভাবে মার্কেটিং করা যায় তাহলে এর চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লাভ এবং লস এর হিসাব দাঁড়াবে আপনার বিক্রয়ের উপর।
আরোও পড়ুনঃ বাংলায় ব্লগিং করে ঘরে বসে আয় করুন।
কতটা শ্রম দিতে হবে
ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আপনি যদি নিজে নিজে পরিশ্রম করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আর যদি আপনার পরিশ্রম কমিয়ে আনতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। আপনার পরিশ্রম বা সময় নির্ভর করবে আপনি কতটা ইনভেস্ট করছেন আর কি পরিমাণে লোকবল প্রয়োগ করছেন তার ওপর। আপনি যদি একা সকল কাজ করতে যান যে কাজটি করতে 10 দিন সময় লাগবে, সেই কাজটিই যদি 10 জন লোকে করে তাহলে একদিনেই করা সম্ভব। আরোও পড়ুন: অনলাইনে আয় করার জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো।
কতটা সময় লাগবে ব্যবসা চালু হতে
এটি কমার্স ব্যবসা শুরু করার পর, আপনি কি পরিমাণে অর্থ ইনভেস্ট করছেন, কী পরিমাণে মার্কেটিং করছেন, এবং কী ধরনের প্রোডাক্ট দিয়ে ব্যবসা করছেন তার উপরে নির্ভর করবে সময়। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি সেগুলো ভালো ভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি নিজে নিজেই ক্যালকুলেট করতে পারবেন যে, আপনার একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে কতদিন সময় লাগবে।
সর্বোপরি আমাদের পরামর্শঃ আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আগে ভালোভাবে এই সর্ম্পকে জানুন, রিসার্চ করুন, প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা নিন, ই-কমার্স সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন তারপর শুরু করুন। এছাড়াও এ ব্যাপারে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন আমরা তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব।
যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এছাড়াও যদি আপনার কোনো পরামর্শ থাকে তাহলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আইনের জটিলতা কেমন আছে?