সফটওয়্যার কি : কম্পিউটারের মাধ্যমে, বিভিন্ন ধরনের কার্যবলী সম্পাদন করার জন্য, কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় ডাটা এবং নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এ ধরনের নির্দেশনা বলির সমষ্টিকে বলা হয় সফটওয়্যার। সফটওয়্যার মূলত অদৃশ্য শক্তি। যাকে ধরা যায় না এবং ছোঁয়া যায় না।
সাধারণত সফটওয়্যার বলতে কম্পিউটার প্রোগ্রাম সমূহ এর সমষ্টিকে বোঝানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সফটওয়্যার হতে কতগুলো প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টি।

যা সফটওয়্যার গুলোকে কর্মক্ষম করে প্রক্রিয়াকরণ এর মাধ্যমে ইউজারদের কাঙ্খিত রেজাল্ট প্রদান করে থাকে। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়ারকে কার্যো উপযোগী সম্পন্ন করা হয়।
তো আপনারা যারা জানতে চান? সফটওয়্যার কি সফটওয়্যার কত প্রকার এবং সফটওয়্যার এর কাজ কি? এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
সফটওয়্যার সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা পেতে, আমাদের লেখা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে করুন।
সফটওয়্যার কি?
সফটওয়্যার হলো, একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশন যা কম্পিউটারের কার্যক্রম নির্দিষ্ট করে। এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন সম্পাদন করে। এটি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রোগ্রামিং দ্বারা তৈরি হয়।
সফটওয়্যার একটি অটোমেটেড উপকরণ যা ডেটা প্রক্রিয়া করে, বিভিন্ন কার্যক্রম সহজ করে তোলে এবং নির্দিষ্ট ফাংশনালিটি প্রদান করে।
সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরণের হতে পারে যেমন- সিস্টেম সফটওয়্যার (যেমন অপারেটিং সিস্টেম), অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (যেমন অফিস সুইট বা ওয়েব ব্রাউজার), ডেভেলপমেন্ট টুলস (যেমন ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট), মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, গেম সফটওয়্যার, ডাটাবেস সফটওয়্যার ইত্যাদি।
সফটওয়্যারের মাধ্যমে, আমরা বিভিন্ন কাজ করতে পারি। যেমন- তথ্য প্রক্রিয়া, ডেটা স্টোরেজ, প্রদর্শন, কমিউনিকেশন, ব্যবস্থাপনা এবং বিনোদন। সফটওয়্যার আমাদের জীবনের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার হয়, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, স্মার্ট টিভি, ইংটারনেট রাউটার ইত্যাদি।
সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি?
সফটওয়্যার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কিছু প্রধান সফটওয়্যার এর উদাহরণ নিম্নোক্ত আলোচনায় প্রদান করা হলো। যেমন-
সিস্টেম সফটওয়্যার:
সিস্টেম সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) নামেও পরিচিত। এটি কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট ওয়ান্ডোজ, ম্যাক ওএস, লিনাক্স ইত্যাদি।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার:
এই ধরণের সফটওয়্যারগুলি ব্যবহারকারীদের কাজে সহজতর করার জন্য ডিজাইন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট অফিস সুইট, ওয়েব ব্রাউজার, মিডিয়া প্লেয়ার, ফটো এডিটর, ভিডিও এডিটর ইত্যাদি।
উন্নত সফটওয়্যার:
এই ধরণের সফটওয়্যারগুলি অন্যান্য সফটওয়্যারের উন্নতি, ডেভেলপমেন্ট এবং পরিচালনা সহজ করতে ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট (IDE), ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (DBMS), গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার, সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার ইত্যাদি।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন:
এই ধরণের সফটওয়্যার গুলো মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং বিভিন্ন কাজে সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন, অনলাইন শপিং অ্যাপ্লিকেশন, গেম অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি।
এইভাবে, সফটওয়্যার প্রকারভেদের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় কাজ সহজ ও সহজতর করে তুলে আনতে সাহায্য করে।
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর পার্থক্য কি?
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার একইসাথে কম্পিউটার সিস্টেমের দুটি মৌলিক উপাদান, কিন্তু তাদের প্রকার, কাজের ধরণ এবং সাধারণত সংস্পর্শ একটু ভিন্ন। যেমন-
সফটওয়্যার:
সফটওয়্যার কম্পিউটারে চালানোর জন্য প্রোগ্রাম গুলি বোঝায় এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এটি কোডের সংজ্ঞায়িত ধারণা গুলির মাধ্যমে কাজ করে। এবং হার্ডওয়্যার কে নির্দেশ দেয়।
সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে একটি অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, গেম, ব্রাউজার, মিডিয়া প্লেয়ার, প্রোগ্রামিং ভাষা, ডেভেলপমেন্ট টুল, ডাটাবেস সফটওয়্যার ইত্যাদি।
মাঝে মাঝে এই দুটি পরিচিতির মধ্যে সম্পর্ক থাকতে পারে, যেমন সফটওয়্যার কোড হার্ডয়্যারেও চালানোর জন্য কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় সামগ্রীকে নির্দেশ দেয়। যেমন- হার্ডডিস্ক, প্রোসেসর বা মেমোরি গুলো কে।
হার্ডওয়্যার:
হার্ডওয়্যার কম্পিউটার সিস্টেমের ফিজিক্যাল অংশ বুঝায়। এটি কম্পিউটারের সামগ্রিক স্ট্রাকচার, যা সাধারণত হার্ডডিস্ক, প্রোসেসর, মেমোরি, মাদ্রাসা, স্ক্রিন, কীবোর্ড, মাউস, নেটওয়ার্ক কার্ড, পাওয়ার সাপ্লাই, মাদ্রাসা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। হার্ডওয়্যার সাধারণত প্রোগ্রাম গুলি চালানোর সামর্থ্য প্রদান করে।
অনলাইনে কাজ করার জন্য জনপ্রিয় কিছ সফটওয়্যার
অনলাইনে কাজ করার জন্য জনপ্রিয় কিছু সফটওয়্যারের লিস্ট নিম্নরূপঃ
মাইক্রোসফট অফিস :
মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশন সুইট হল- অনলাইনে কাজ করার জন্য একটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার প্যাকেজ। এটি ডকুমেন্ট প্রসেসিং, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন, ইমেল ক্লায়েন্ট, নোটটেকিং, এবং কালেন্ডার সহ বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের সমন্বয়ে তৈরি।
গুগল ডকস:
গুগল ডকস হল একটি অনলাইন ডকুমেন্ট এডিটর এবং সংক্ষেপ সেবা যা কোলাবরেটিভ ডকুমেন্ট শেয়ারিং এবং সম্পাদনায় সহায়তা করে। এটি স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন, ফরম সংগ্রহ, নোটস এবং বিভিন্ন ডকুমেন্ট ফরম্যাটে কাজ করার সুযোগ সরবরাহ করে।
স্ল্যাক:
স্ল্যাক একটি অনলাইন কমিউনিকেশন টুল যা দক্ষতা অনুসারে টিমের সদস্যদের মধ্যে মেসেজ পাঠানো, ফাইল শেয়ার করা, সম্পর্কিত টপিক কনভার্সেশন সংরক্ষণ করা এবং বিভিন্ন ইন্টেগ্রেশন প্রদান করে।
ট্রেলো:
ট্রেলো হল একটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল যা কার্ড এবং বোর্ডের মাধ্যমে প্রজেক্ট পরিচালনা, কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করা, টিম মেম্বারদের সহযোগিতা করা এবং অস্থায়ী দলের কাজ পরিচালনা করা যায়।
এটি শুধুমাত্র কিছু উদাহরণ এবং এই লিস্টটি অপূর্ণ হতে পারে, কারণ অনলাইনে বিভিন্ন সফটওয়্যার সেবাগুলি বিস্তারিত আছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন পছন্দসই সফটওয়্যারগুলি রয়েছে।
গুগল ড্রাইভ:
গুগল ড্রাইভ সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা মূলত আমাদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য গুলো সংরক্ষিত করে, রাখতে পারি। এবং প্রয়োজনমতো সেই তথ্য গুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য পুনরুদ্ধার করতে পারে।
বিশেষ করে ব্লগিং করার ক্ষেত্রে আমরা যে সকল ডাটা গুলো ওয়েবসাইটের সংরক্ষিত করি। সেগুলো আমরা সরাসরি গুগল ড্রাইভে জমা রাখতে পারব।
যা থেকে আমাদের ওয়েবসাইটে যদি কোন প্রকার হয়। সেই সংরক্ষিত করে রাখা ওয়েবসাইটের ডাটা গুলো আমরা পুনরায় ব্যাকআপ করে নিতে পারব।
সফটওয়্যার এর কাজ কি?
সফটওয়্যার হলো- একটি প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশন, যা কম্পিউটার বা অন্যান্য উপকরণে ব্যবহার করে, নির্দিষ্ট কাজ সহজ করে তোলে। এটি ডেভেলপমেন্ট প্রোসেসের একটি অংশ এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন এর মাধ্যমে তথ্য প্রদান করে থাকে।
সফটওয়্যার কাজ করতে পারে, তার বিভিন্ন উদাহরণ যেমন:
অফিস সফটওয়্যার: অফিস সফটওয়্যার দ্বারা কোনও অফিসে ব্যবস্থাপনা, ডেটা প্রক্রিয়া এবং কাজের প্রবাহ সহজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যারগুলি (ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট) এই ধরণের সফটওয়্যার গুলির উদাহরণ।
ওয়েব ব্রাউজার: ওয়েব ব্রাউজার সফটওয়্যার দ্বারা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়। ব্যবহারকারীরা ওয়েব ব্রাউজারব্য বহার করে ওয়েবসাইট, অনলাইন সেবা সমূহ, সামগ্রিক তথ্য এবং অনলাইন সংযোগের উপকারিতা পান। গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ ইত্যাদি ওয়েব ব্রাউজারের উদাহরণ।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন:
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হলো মোবাইল ডিভাইসে চলার জন্য তৈরি করা একটি এপ্লিকেশন। এই সফটওয়্যারগুলি আপনাকে মোবাইল ফোনে কাজ করতে সাহায্য করে, যেমন সামগ্রিক তথ্য, গেম, অনলাইন শপিং, সামাজিক যোগাযোগ এবং বিনোদনের সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণ স্বরূপ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, গুগল ম্যাপস ইত্যাদি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের উদাহরণ।
সফটওয়্যারের কাজ হলো মানুষের জন্য কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ সহজ ও সহজতর করা। এই সফটওয়্যার গুলি তৈরি ও উন্নতি করা হয় প্রোগ্রামারদের দ্বারা, যারা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে কোড লেখা, টেস্ট করা এবং পরিচালনা করা সফটওয়্যার উন্নতি করে।
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা আপনার যারা আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়লেন তারা জানতে পারলেন। সফটওয়্যার কি? সফটওয়্যার কত প্রকার এবং সফটওয়্যার এর কাজ কি?
তো আলোচনা শেষে আপনার যদি সফটওয়্যার সম্পর্কে আরও কোন ধারণা জানার প্রয়োজন হয়। তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
ধন্যবাদ।