ওয়ারিশ সনদ কি ? কিভাবে পাবেন এবং কোথায় ব্যবহার করবেন ?

ওয়ারিশ সনদ কি : আমাদের সমাজে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর। তার স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি, উত্তরাধিকারীদের/ ওয়ারিশ’র মধ্যে ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী বন্টন করে দেয়া হয়।

এজন্য, সে ব্যক্তির উত্তরাধিকার কে বা কারা তা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এ বিষয়টি নির্ধারণ করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ এর কার্যালয় যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং আদালত এই ওয়ারিশের সনদ গুলো  সংগ্রহ করতে হয়।

ওয়ারিশ সনদ কি ? কিভাবে পাবেন এবং কোথায় ব্যবহার করবেন ?
ওয়ারিশ সনদ কি ? কিভাবে পাবেন এবং কোথায় ব্যবহার করবেন ?

আপনারা যারা ওয়ারিশ প্রাপ্ত রয়েছেন। তারা চাইলে উপরোক্ত কার্যালয় হতে, আপনার পূর্বপুরুষের পৈত্রিক সম্পত্তির ওয়ারিশ সনদ উত্তোলন করতে পারবেন।

আর আপনি যখন আপনার দাদা এবং পিতার ওয়ারিশ প্রাপ্ত হয়ে ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করবেন। তখন ওয়ারিসের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।

আমরা জানি একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পরে, যে জায়গা জমি রেখে যান। সেগুলো তার ওয়ারিশগণ ভোগ করতে পারেন। তাই ওয়ারিশগণরা মৃত ব্যক্তির সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পর্কে ভোগ করতে চাইলে অবশ্যই, ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে জানাবো। ওয়ারিশ সনদ কি ? ওয়ারিশ সনদ কিভাবে পাবেন ? এবং কোথায় ওয়ারিশন ব্যবহার করবেন। তাই এ বিষয়ে সঠিক ধারণা পেতে আমাদের লেখা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ওয়ারিশ সনদ কি ?

ওয়ারিশ সনদ হচ্ছে, কোন মানুষের মৃত্যুর পর তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণের মধ্যে ব্যক্তিগত আইন মোতাবেক বন্টন করা হয়।

এক্ষেত্রে দেখা যায় স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির উত্তরাধিকার এবং ওয়ারিশকে তার সবকিছু জানলে অফিস আদালত কিংবা প্রতিষ্ঠান সে বিষয়ে জানেনা।

আবার অনেক সময় দেখা যায়, এক ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী এবং সন্তান থাকলে, মৌখিকভাবে কাউকে ত্যাজ্য পুত্র বা পরিবারের কাছে থেকে দূরে থাকে। তার প্রকৃত উত্তরাধিকার কারা সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠে আসে।

এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বা আদালত থেকে কারা সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ প্রাপ্ত সে সম্পর্কে। একটি সনদ নেওয়ার দরকার হয়। আর এটিকেই বলা হয় ওয়ারিশ সনদ।

কিভাবে ওয়ারিশ সনদ পাবেন ?

ওয়ারিশ সনদ সাধারণত, স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় হতে, পাওয়া যায়। যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এর কার্যালয় হতে, ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। যা কার্যালয়ের প্রধান একজন মৃত ব্যক্তির আইনি ওয়ারিশদের স্বীকৃতি প্রদান করবে।

আপনারা চাইলে ওয়ারিস সনদপত্র দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে টাকা পয়সা এবং অস্থাবর সম্পত্তির দেনা পাওনা, ব্যাংক বা বীমা ইত্যাদি সুষ্ঠু হিসাব পাওয়ার জন্য।

যাতে করে ভবিষ্যতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়। সেজন্য দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে, ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করা হয়।

ওয়ারিশ সনদপত্র নেওয়ার জন্য কি কি লাগে ?

আপনি যদি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় হতে ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে চান? সেক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র লাগবে যেমন-

  • ওয়ারিশ গণদের এক কপি করে সত্যায়িত ছবি।
  • মৃত ব্যক্তির মৃত সনদ এক কপি সত্যায়িত।
  • সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন।

উপরোক্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করে, ওয়ারিশ সনদপত্র নেওয়ার জন্য আর্জি জানাতে পারবেন।

ওয়ারিশ সনদ উত্তোলনের খরচ কত ?

আপনি যদি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় হতে ওয়ারিশ সনদপত্র তুলতে চান? সে ক্ষেত্রে আপনার খরচ হতে পারে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। যা আপনাকে প্রদান করতে হবে সরকারি ফি হিসেবে।

ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তির নমুনা

বরাবর
চেয়ারম্যান
……………. ইউনিয়ন পরিষদ।
ইউনিয়ন পরিষদের ঠিকানা।

বিষয়ঃ ওয়ারিশ সনদ পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন।

জনাব,

যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, এখানে মৃত ব্যক্তির নাম লিখতে হবে। মৃত ব্যক্তির পিতার নাম লিখতে হবে, মৃত ব্যক্তির মাতার নাম লিখতে হবে, গ্রামঃ (গ্রামের নাম লিখতে হবে), ডাকঘরঃ (ডাকঘরের নাম লিখতে হবে), ওয়ার্ড নংঃ (ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেই ওয়ার্ড নং উল্লেখ করতে হবে), উপজেলাঃ (উপজেলার নাম লিখতে হবে), জেলাঃ (জেলার নাম লিখতে হবে)। তিনি নিম্নলিখিত ছকে ওয়ারিশগণ রেখে যান।

ক্রমিক নং ওয়ারিশগণের নাম সম্পর্ক বয়স মন্তব্য
 ১। ওয়ারিশ এর সম্পূর্ণ নাম লিখুন মেয়ে ৩৩
২। ওয়ারিশ এর সম্পূর্ণ নাম লিখুন মেয়ে ৩৮
৩। ওয়ারিশ এর সম্পূর্ণ নাম লিখুন ছেলে ৪৫
৪। ওয়ারিশ এর সম্পূর্ণ নাম লিখুন ছেলে ৪৯

অতএব, মহোদয় সমীপে আবুল আবেদন যে, উপরে উল্লেখিত বিষয়ে আমাকে একটি ওয়ারিশ সনদপত্র প্রদান করতে আপনার সু-আজ্ঞা হয়।

নিবেদক

আবেদনকারীর নাম

পিতার নামঃ

ঠিকানাঃ

মোবাইল নাম্বারঃ

ওয়ারিশ সনদ কোথায় ব্যবহার করবেন ?

আপনারা যারা পূর্বপুরুষের পৈত্রিক সম্পত্তির অংশীদার। সেক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয় হতে, ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

আর ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করার পরে সেটি, আপনারা কোথায় ব্যবহার করবেন। সে বিষয়ে জানতে তথ্য গুলি অনুসরণ করুন।

  • বিভিন্ন জমি জমা বা সম্পত্তির ক্ষেত্রে, ওয়ারিশ সনদ ব্যবহার করতে হবে।
  • নামজারি করার জন্য ওয়ারিশ সনদ ব্যবহার করতে হবে।
  • আইনগত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ওয়ারিশ সনদপত্র ব্যবহার করতে হবে।
  • ঘোষণ মূলক মুকাদ্দমায় পড়ে সনদ ব্যবহার করতে হবে।
  • ব্যাংক বা বিময় মৃত ব্যক্তির জমানো টাকা থাকলে ওয়ারিশ সনদ ব্যবহার করতে হবে।
  • মৃত ব্যক্তির যদি সরকারি কর্মকর্তা অবস্থায় মৃতবরণ করেন। পেনশনের টাকা উত্তোলনের জন্য ওয়ারিশ সনদ ব্যবহার করতে হবে।

উপরোক্ত খাত গুলো ছাড়াও আরো অনেক বিশেষ বিশেষ জায়গায়, ওয়ারিশ সনদপত্র ব্যবহার করার দরকার হতে পারে।

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আপনার যারা ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে চান? তারা উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ে আবেদন করে, সরকারি ফি পরিশোধ করে খুব সহজেই ওয়ারিশ সনদপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।

তো এ বিষয়ে আপনার যদি আরও কোন প্রশ্ন থাকে। তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top