ভিডিও কনফারেন্সিং কি? জনপ্রিয় ১০টি ভিডিও কনফারেন্সিং এপস।

আস্সালামু আলাইকু! প্রিয় বন্ধুগন সবাই কেমন আছেন? আবারো আমি হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সামনে নতুন আরো একটি পোষ্ট নিয়ে।

আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ভিডিও কনফারেন্সিং কি? এবং ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা এবং ১০ টি সেরা ভিডিও কনফারেন্সিং এপস।
ত চলুন বন্ধুরা দেরি না করে শুরু করে দেই আমাদের মূল আলোচনা।

সূচনা:-

বর্তমানে ঘরে বসে সবার সাথে যোগাযোগ করার সেরা মাধ্যম হলো ভিডিও কনফারেন্সিং। ভিডিও কনফারেন্সিং করে এখন খুব সহজেই ঘরে বসে পৃথিবী এক প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে দেখা করতে পারে কথা বলতে পারে।

ভিডিও কনফারেন্সিং
ভিডিও কনফারেন্সিং

এখন যেহেতু করোনা মহামারির কারনে সব কিছু বন্ধ রয়েছে তাই এক সাথে জরো হয়ে দেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন মানুষ প্রযুক্তর সাহায্য নিয়ে ভিডিং কনফারেন্সিং করে একি সাথে অনেক জন মিলে দেখা করতে পারে আড্ডা দিতে পারে।

* ভিডিও কনফারেন্সিং কি?

ভিডিও কনফারেন্সিং হলো একটি কনফারেন্সিং ব্যবস্থা যা ব্যবহার করে মনিটর বা পর্দার সামনে সবাই একত্বিত হয়ে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে দেখা করতে পারে।

এই প্রদ্ধতি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। বর্তমানে এই প্রদ্ধতি ব্যবহার করে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গার লোক এক সাথে বিভিন্ন সভার আয়োজন করতে পারেন।

আর ভিডিও কনফারেন্সি শুধু ব্যবসা-বানিজ্যের কাজেই নয় বর্তমানে এই প্রদ্ধতি শিক্ষা ক্ষেত্র এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যপক ভূমিকা পালন করছে।

* ভিডিও কনফারেন্সিং এর প্রয়োজনীয় উপকরন।

  • মডেম।
  • ওয়েবক্যাম।
  • ভিডিও ক্যাপচার কার্ড।
  • মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার।
  • ইন্টারনেট সংযোগ।
  • মাইক্রোফোন।
  • টেলিফোন সংযোগ।
  • প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার।

* ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের লোকের সাথে সহজে মুহুর্তের মধ্যে দেখা করা যায় কথা বলা যায়। এই প্রদ্ধিতে খরচ কম। যাত্রায়াত করার প্রয়োজন হয় না, এতে সময় সাশ্রয় হয়।ভিডিও কনফারেন্সিং করার সময় কল রেকর্ড করার সুবিধা রয়েছে। এই প্রদ্ধতিতে ঘরে বসে বিভিন্ন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও সেবা গ্রহন করা যায়। এতে সময় অপচয় হয় না।

* ভিডিও কনফারেন্সিং করার কয়েকটি জনপ্রিয় এপস।

বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য অনেক এপস রয়েছে যে গুলো ব্যবহার করে খুব সহজে মুহুর্তের মধ্যে একে অপরের সাথে আলাপ করতে পারবেন। নিচে আমি ১০টি জনপ্রিয় ভিডিও কনফারেন্সিং করার এপস আপনাদের শেয়ার করব। ত চলুন বন্ধুরা আলোচনা শুরু করে দেই।

১/ জুম মিটিংস।

জুম মিটিংস একটি জনপ্রিয় ভিডিও কনফারেন্সিং এপস।এটি ব্যবহার করে একি সাথে অনেক মানুষ লাইভে কথা বলতে পারবে।জুম মিটিংস এপসে যে কেউ ফ্রিতে একাউন্ট তৈরি করে ভিডিও কনফারেন্সিং করতে পারবে।

ফ্রি একাউন্ট ইউজার ভিডিও কিংবা অডিও রেকর্ড করার পাশাপাশি তারা তাদের স্ক্রিন অন্য পার্টিসিপেন্টদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

এই এপস এর ফ্রি ভার্সনে একি সাথে সর্বোচ্চ ১০০ জন লোক ভিডিও কনফারেন্সিং এ যুক্ত হতে পারবে।তবে এখানে সময় ৪০ মিনিটেই সীমাবদ্ধ থাকবে।কিন্তু পেইড প্যানেলে আপগ্রেড করলে সময়ের এই সীমাবদ্ধতা আর থাকবে না।

আরও পড়ুন: মাসে 1000 ডলার আয় করুন অনলাইন জব করে। সেরা 5টি বাংলাদেশী অনলাইন জব প্ল্যাটফর্ম

২/ স্কাইপ।

বর্তমানে স্কাইপের সাথে ত আমরা সবাই বেশ পরিচিত। আর তাই স্কাইপের নাম শুনেনি এমন মানুষ ও এখন খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। স্কাইপের প্রচলন কিন্তু অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে।এটি বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য বেশ জনপ্রিয় এপস।

পূর্বে এতে একি সাথে ২৫ জন ভিডিও কনফারেন্সিং যোগ হতে পারতো।কিন্তু ২০১৯ সালে এটি পরির্বতন করে প্রতিষ্টানটি। বর্তমানে এই এপসে একি সাথে ৫০ জন লোক ভিডিও কনফারেন্সিং এ যোগ দিতে পারে।

৩/ স্ল্যাক ।

ভিডিও কনফারেন্সিং করার আরো একটি জনপ্রিয় এপসের নাম হলো স্ল্যাক।স্ল্যাক এপস এর ভিডিও কনফারেন্সিং ফিচারটি প্রায় অনেকটা এড-এন এর মতো কাজ করে।

যদিও স্ল্যাক এপসে ওয়ান-অন-ওয়ান ভিডিও কলিং সুবিধা বিনামূল্য পাওয়া যায় তবুও কিন্তু বড় আকারের মিটিং এর ক্ষেত্রে এন্টারপ্রাইজ লেভেলের প্রাইসিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

৪/ মাইক্রোসফট টিমস।

মাইক্রোসফট টিমস এমন একটি ভিডিও কনফারেন্সিং এপস, যেখানে আপনি বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে পারবেন,ভিডিও কল করতে পারবেন।

এটি ভিডিও, অডিও এবং চ্যাটের মাধ্যমে ওয়েব যোগাযোগের জন্য একটি শক্তিশালী এপস। মাইক্রোসফটে মিটিং গুলো রেকর্ড করা যায় এবং পরর্বতিতে তা শেয়ার করার জন্য সংরক্ষন করা যায়।

তবে মাইক্রোসফট টিমস এপস এর সর্ম্পূণ সুবিধা গুলো ভোগ করার জন্য মাইক্রোসফট ৩৬৫ প্যাকেজ এর সাবস্ক্রিভশন অবশ্যই থাকতে হবে।

৫/ জিতসি মিট।

জিতসি মিট ১০০% ফ্রি এবং ফিচার সমৃদ্ধ একটি ওপেন সোর্স ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম। এই এপসে রয়েছে ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য প্রদত্ত সার্ভার।তবে ইউজাররা চাইলে তাদের নিজেদের সার্ভের ভিডিও কনফারেন্স হোস্ট করতে পারবেন।

এই এপসে একি সাথে ১০০ জনের ভিডিও কনফারেন্সিং এ যুক্ত হওয়ার কথা থাকলে ও বর্তমানে এতে একি সাথে ৭৫ জন জয়েন করতে পারেন। জিতসি মিট এপসে ভিডিও কনফারেন্সিং করার সময় আপনার স্কিন অন্যদের সাথে শেয়ার করার ও সুবিধা রয়েছে।

তাছাড়া ও এই এপসে ভিডিও কনফারেন্সিং রেকর্ড করে সেভ করে রাখা যায়। আরো থাকছে ইউটিউবে  স্ট্রিম কিংবা ডাউনলোড করার সুবিধা।

৬/ হ্যাংআউটস মিট।

হ্যাংআউটস মিট ভিডিও কনফারেন্সিং এর এই এপসটি ব্যবহার করা অনেক সহজ।শুধু মাত্র একি জিমেইল একাউন্ড রয়েছে এমন মানুষরা ও এটি খুব সহজে ব্যবহার করতে পারবেন।

এই এপস ব্যবহার করে একি সাথে সর্বোচ্চ ১০ জন ভিডিও কনফারেন্সিং এ যুক্ত হতে পারবে।এতে ব্যবহারকারীরা ভিডিও কনফারেন্সিং এ জয়েন করতে পারবে ভয়েজ চ্যাট,ইমেইল কিংবা লিংকের মাধ্যমে।

গুগোলের জি সুট ব্যবহারকারীরা ডোমেইনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ভিউয়ারস সাপোর্ট ভিডিও স্ট্রিম তৈরি করতে পারবে।তা ছাড়াও রয়েছে মিটিংস গুলো সরাসরি গুগোল ড্রাইবে রেকর্ড এবং সেভ করার সুবিধা।

৭/ সিস্কো ওয়েবেক্স।

সিস্কো ওয়েবক্স জুম মিটিংস এবং মাইক্রোসফট টিমস এর মতোই একটি ভিডিও কনফারেন্সিং এপস। সিস্কো ওয়েবেক্স এমন এটি প্রতিষ্টান, যা সাধারনত মূলবান এন্টারপ্রাইজ পণ্যগুলোর সাথে সসম্পর্কিত।

এই এপসটি ফিচার যুক্ত এবং এটি বেশির ভাগ বড় আকারের সংস্থান গুলোকে সেবা প্রদান করে থাকে। তবে আপনি যদি ছোট কোন সংস্থার কাজে এই এপসটি ব্যবহার করেন তবে আপনি এটি ফ্রি ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারেন।

এতে একি সাথে ১০০ জন ভিডিও কনফারেন্সিং এ জয়েন করতে পারবে।কিন্তু এতে ভিডিও কনফারেন্সিং এর কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই।তাছাড়াও এখানে ফ্রি একাউন্টে আপনি ১জিবি ক্লাউড স্টরেজ পাবেন।

এবং এই এপসে আপনি ভিডিও কনফারেন্সিং রেকর্ড করতে পারবেন এবং স্কিন ও অন্যদেন সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

সিস্কো ওয়েবেক্স আপনারা ওয়েবসাইট, ডেক্সটপ অ্যাপলিক্যাশন,মোবাইল এপস ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন।

৮/ ডিসকর্ড।

ডিসকর্ড একটি দুর্দান্ত ভিডিও কনফারেন্সিং এপস। এই এপস ব্যবহার করে একি সাথে ৫০ জন ভিডিও কনফারেন্সিং এর জয়েন করতে পারে।গেইমারদের কাছে এই এপসটি বেশ জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম।

এই এপসটি ব্যবহার করা অনেক সহজ। এটি ব্যবহার করার জন্য এপসটি  ডাউনলোড করে সাইন আপ করে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।ইতিমধ্যেই ডিসকর্ড ভিডিও কনফারেন্সিং এপসটি অনেকেই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

৯/ জোহো মিটিং।

জোহো মিটিংস এপসটি তার অফিস স্যুটের জন্য বেশ জনপ্রিয়। এটি মূলত একটি স্টপ সলিউশন এপস। এখানে আপনি আপনার অফিসের মিটিং গুলো শিডিউল করতে পারবেন, অতীতিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন, মিটিংসের ডকুমেন্ট তৈরি করতে পারবেন। এবং তার সব কিছুই আপনি রিয়েল-টাইমে করতে পারবেন।

জোহে মিটিংস এপসটি অফিসের একাউন্ট পরিচালনা,ওয়ার্ড প্রসেসিং, এবং ওয়েব কনফারেন্সিং এর জন্য  স্পেশাল কিছু ফিচার এতে রয়েছে।আর জোহো মিটিং এপস এর একটি বড় সুবিধা হলো এটি সর্ম্পূণ ওয়েব ভিত্তিক হওয়ায় এখানে এপস ব্যবহারেরর কোন ঝামেলা নেই।

১০/ গো টু মিটিং।

উপরে উল্লেখিত সমস্ত সেরা ভিডিও কনফারেন্সিং এপস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম ভিডিও কনফারেন্সি এপস হলো গো টু মিটিং।এই এপসটি  জুম মিটিং এপস এর বিকল্প হিসাবে কাজ করে।

এপসটি ব্যবহার করে আপনারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে যেকোন ডিভাইস দিয়ে ভিডিও কিংবা অডিও মিটিং হোস্ট করতে পারবেন।এই এপসের একটি বড় সুবিধা হলো ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য ২৫০ জন এবং ওয়েবিনারদের জন্য ১০০০ জন অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়।

শেষ কথা :-

ত প্রিয় বন্ধুরা এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য জনপ্রিয় ১০ টি ভিডিও কনফারেন্সিং এপস নিয়ে। আশা করছি পোষ্টটি পড়ে আপনারা সবাই অনেক উপকৃত হবেন।

পোষ্টটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দেবেন। এবং যদি পোষ্টটি ভালো লাগে তবে অবশ্যই বেশি বেশি করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।আর যদি পোষ্টটি সর্ম্পকে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমা কে জানিয়ে দেবেন। আমি ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করব আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার।

ত আজ এই পর্যন্তই সবাই অনেক ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।আর এতক্ষন ধৈর্য ধরে মনোযোগ সহকারে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top