চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত : আপনি কি চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন। যদি তাই হয়! সঠিক একটি আর্টিকেলে চলে এসেছেন।
আমরা আজকের এই আর্টিকেলে চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেব।
বর্তমান সময়ে মানুষ চাকরিতে নতুন জয়েন করা এবং পুরাতন চাকরি ছেড়ে দেওয়া এই দুটি হচ্ছে, আমাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনের একটি।

বর্তমানে অনেকেই কম বেশি চাকরি পরিবর্তন করতে আগ্রহী থাকে। আর এ চাকরি পরিবর্তনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া।
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের যে দরখাস্ত অফিস কর্তৃপক্ষকে লেখার দরকার হয়। সে বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা কাজ করে।
তো যাই হোক, আপনাকে সব সময় একে সুন্দর করে, চাকরির রিজাইন লেটার লিখতে হবে। আর আপনি যদি চাকরি থেকে অব্যাহত দেওয়ার দরখাস্ত লিখতে কুন্ঠা বোধ করেন।
তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ অনুসরণ করলে জানতে পারবেন কিভাবে চাকরির রিজাইন লেটার লেখা যায়।
চাকরির রিজাইন লেটার কি ?
রিজাইন লেটার হল একটি লিখিত নোটিশ। যা একজন ব্যক্তি তার নিজের অফিস বা প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার অভিপ্রায় ঘোষণা করতে লিখেন।
একটি চাকরির রিজাইন লেখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির নোটিশ এর একটি অফিসিয়াল রেকর্ড তৈরি করা। কিন্তু এটিকে কর্মচারীর তরফ থেকে একটি সৌজন্য জন্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়।
একটি রিজাইন লেটার এর মাধ্যমে আপনি পুরাতন অফিসে কাজের শেষের দিন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করতে পারবেন। ফাইনাল ট্রানজিশনের সহায়তা করতে পারবেন। এবং আপনার নিয়োগকর্তাদের প্রতিষ্ঠানের চাকরি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে পারবেন।
আর এই প্রক্রিয়াকেই মূলত চাকরির রিজাইন লেটার বলা হয়।
একটি রিজাইন লেটার -এ কি কি থাকা উচিত ?
কোন চাকরির রিজাইন লেটার তৈরি করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। আর সেগুলো আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব।
যা অনুসরণ করে চাকরির রিজাইন লেটার লিখতে পারলে, খুব সহজে সেটি মঞ্জুর হবে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, একটি রিজাইন লেটারে কি কি থাকা উচিত।
- অভিবাদন জানানো
- আপনার উদ্দেশ্য
- আপনার চাকরির শেষ তারিখ
- আপনার চাকরি ছাড়ার কারণ
- ধন্যবাদ জানানো
- নোটিশ পিরিয়ডে অফিস/ কোম্পানিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি
- আপনার যোগাযোগ এর সঠিক তথ্য
আপনি যখন একটি চাকরির রিজাইন লেটার লিখবেন তখন অবশ্যই, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত তে এই বিষয়গুলো সংযুক্ত করতে হবে।
চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আপনি যেহেতু এটি চাকরির রিজাইন লেটার লিখতে চাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই। রিজাইন লেটারের একটি ফরমাল ফরমেট মেনে চলতে হবে। তাই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্তা তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে লিখতে হবে। যেমন-
প্রথমে তারিখ
আপনি যেদিন অফিস ছেড়ে দিবেন সেই তারিখটি অবশ্যই সেখানে উল্লেখ করতে হবে। কমপক্ষে 1 মাস কোন কোম্পানিকে আপনার জায়গায় কোন একজন নতুন কর্মে যুক্ত করার সময় দিতে হবে।
শর্ট নোটিশ পিরিয়ডে চাকরি ছাড়তে চাইলে অবশ্যই কোম্পানির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তারপর, অব্যাহতির তারিখ লিখতে হবে।
আপনার ঠিকানা
চাকরির রিজাইন লেটার ফরমাল লেখার ক্ষেত্রে, অবশ্যই নিজের ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যোগ করতে ভুলবেন না।
সম্বোধন করা
আপনার অফিস কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে যে সম্বর্ধন করবেন সেটি যেন স্পষ্ট থাকে।
লেখার ভঙ্গিমা
আপনার লেখার ধারণাটি যাতে ভদ্র ভাষায় এবং মার্জিত ভাষায় হয়। কোন প্রকার কত কথা, আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতি এবং পেশাগত জীবনের পক্ষে ক্ষতিকারক।
তাই শব্দ লেখার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। যতটা সম্ভব ছোট করে, অবশ্যই গুছিয়ে আপনার বক্তব্য গুলো লেখার চেষ্টা করবেন।
একই ধরণের বক্তব্য বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এখানে যেন আপনার কোম্পানির ছাড়ার কারণ গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখিত থাকে।
শুরু এবং সমাপ্তি
একটি ভাল রিজাইন লেটার শুরু এবং শেষ দুইটি ভাগে আকর্ষণীয় হওয়া দরকার। সব সময় জানবেন, যে কোন অফিসিয়াল দরখাস্তে কোন ভুল ত্রুটি থেকে গেলে, কোন ভাবেই ভালো দেখা যায় না।
তাই যতটা সম্ভব ভুল ভ্রান্তি না করে, স্পষ্টভাবে চাকরির রিজাইন লেটার লেখার চেষ্টা করবেন। তো চলুন আমি আপনার সুবিধার জন্য এখন চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নমুনা বাংলায় দেখিয়ে দিচ্ছি।
চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম নমুনা সহ
আমরা এখানে আপনাদের সুবিধার জন্য, চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নমুনা প্রস্তুত করেছি। যা অনুসরণ করে আপনি যে কোন চাকরিতে রিজাইন লেটার পাঠাতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।
তারিখ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ইং
কর্তৃপক্ষের নাম এবং পদ
অফিস/ কোম্পানির নাম
অফিস/ কোম্পানির ঠিকানা
বিষয়: চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যে আবেদন।
স্যার / ম্যাডাম,
যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মোঃ/ মোসাম্মৎ (এখানে আবেদনকারীর নাম লিখবেন), দীর্ঘ আট বছর যাবত আপনার অফিস/ কোম্পানির (এখানে অফিসের নাম লিখবেন), একজন কর্মচারী (এখানে পদের নাম লিখবেন) হিসেবে নিযুক্ত আছি। তবে বর্তমানে আমি আপনার এই অফিস/ কোম্পানি থেকে অভিজ্ঞতার জোরে, অন্য একটি বহু জাত প্রতিষ্ঠানে (এখানে আপনার নিজস্ব সমস্যায় লিখবেন), ব্যাংক ম্যানেজার পদে যুক্ত হওয়ার অফার পেয়েছি। আমরা সকলেই জীবনের উন্নতি করতে চাই। আর আমি এই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে চাই না। তাই আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার পক্ষে আপনার অফিসে/ কোম্পানিতে আর কাজ করা সম্ভব হবে না। আমি আপনার এই অফিসে/ কোম্পানিতে কাজ করার সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে- ১৩/১১/২০২৩ ইং।
আপনার দেওয়া সাহায্য এবং সহকর্মীদের অমূল্য সাহায্যের জন্য আমি এই অফিস/ কোম্পানি থেকে অনেক কিছু শিখেছি্ আপনার এই কোম্পানিতে কাজ করে আমি অনেক পেশাদার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যা আমাকে ভবিষ্যতেও সমৃদ্ধ করবে আশা করছি। এই অফিস/ কোম্পানির প্রত্যেকের আন্তরিক ব্যবহার আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। আমি আরো আশা রাখছি যে, আমাদের এই কোম্পানি (এখানে অফিসের নাম) ভবিষ্যতে আরও উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আর আমার ইচ্ছা থাকলো যে, এই অফিস/ কোম্পানিও আমাকে তাদের একজন মূল্যবান কর্মী হিসেবে চিরকাল মনে রাখবেন। আপনাদের সকলের অবদান আমি কখনোই ভুলবো না। এই অফিস/ কোম্পানি চাইলে আমি আমার স্থানে নিযুক্ত হওয়ার নতুন কর্মচারীকে ট্রেনিং/ প্রশিক্ষণ দিতে পারব। যাতে কোম্পানির কোন রুপ সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
এমতাবস্থায় আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যে, আমার এই চাকরির রিজাইন লেটার মঞ্জুর করে আমাকে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক
আবেদনকারীর নাম এবং স্বাক্ষর
অফিসের ঠিকানা
অফিস/ কোম্পানির পরিচয় পত্রের নম্বর
আবেদনকারীর পূর্ণ ঠিকানা
মোবাইল নাম্বার/ ইমেইল এড্রেস
উপরে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী আপনারা খুব সহজেই চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন লিখতে পারবেন।
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা আপনারা যে কারণেই চলমান চাকরি থেকে অব্যাহতি পেতে চান? সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনারা উপরে দেওয়া চাকরির রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম অনুসরণ করে আপনার প্রতিষ্ঠানের জমা দিতে পারেন।
আর চাকরি থেকে অবহিত দেওয়ার দরখাস্ত সম্পর্কে আপনার যদি আরো কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।