দিন যতই এগুচ্ছে ততই যেন কর্মক্ষেত্রগুলো হয়ে উঠছে আরো প্রতিযোগীতামূলক। আর সেই সাথে দিন দিন বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে চরম মাত্রায়। তবে আপনি যদি নিজেকে একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি হিসেবে মনে করে থাকেন, তবে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ব্যবসায়ী। আর নিজে চাকুরী না করে শত শত বেকার মানুষের কর্মক্ষেত্র যোগান দিতে পারেন।
বিষয়টি আদতে অনেক কঠিন আর জটিল মনে হলেও বর্তমানে ইন্টারনেট সেবার জন্য আজ হাজারো মানুষ তাদের স্বপ্নের ব্যবসা খুব সহজেই শুরু করছে। কিন্তু কীভাবে?? হ্যা ঠিক ধরেছেন। ই-কমার্স ব্যবসা!! তবে আমাদের এই আজকের আর্টিকেলটি শুধু আপনারই জন্য।
যে যে বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোকপাত করতে চলেছি, চলুন সেগুলো আগে এক পলক দেখে নিই-
ই-কমার্স ব্যবসা কী? ই-কমার্স ব্যবসা এর কিছু প্রকারভেদ, ই-কমার্স ব্যবসা কেন শুরু করবেন? ই-কমার্স ব্যবসার জন্য যা যা লাগে, ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর খরচপাতি কেমন?, বাংলাদেশে ই-কমার্স এর সুবিধা অসুবিধা- ইত্যাদি
মোট কথা শূন্য থেকে একটি সফল ই-কমার্স ব্যবসা গড়ে তোলার সম্পূর্ণ গাইডলাইন। চলুন শুরু করা যাক-
ই-কমার্স কী? (What is E-Commerce Business)
ই-কমার্স শব্দটিকে শাব্দিকভাবে ভাংলে আমরা পাই ইলেকট্রনিক কমার্স বা ইলেকট্রনিক বাণিজ্য। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াম এর মাধ্যমে যে বাণিজ্য বা ব্যবসা পরিচালনা করা হয়, তাকেই আমরা ই-কমার্স হিসেবে ধরে নিতে পারি।
এখন ব্যবসা বলতে আমরা কী বুঝি? কোন পন্য একজনের কাছে কিনে নিয়ে কিংবা নিজের উদ্যোগে তৈরি করে সেটা কাস্টোমার বা আরেকজনের কাছে বিক্রি করাই হলো ব্যবসা। আর এই ব্যবসা বা পণ্য বিক্রির কাজটিকে যদি আমরা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারি তবে তা হবে ই-কমার্স।
পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের পাশাপাশি থাকছে অর্থ লেনদেন, ডাটা আদান প্রদানের মত আরো কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়াদি। বুঝতেই পারছেন, প্রচলিত ব্যবসার তুলনায় এটি একটু আলাদা রকমের হবে। পুরো বিষয়টি সম্বন্ধে আরো ভালোভাবে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ই-কমার্স এর কিছু প্রকারভেদ-
এত বড় একটি বিষয় কিন্তু এর প্রকারভেদ থাকবে না। তা কি করে হয়। তবে চলুন জেনে আসি ই-কমার্সের কিছু প্রকার নিয়ে।
ব্যবসাক্ষেত্রে লেনদেনের দুই পক্ষের বৈশিষ্ট এর উপর ভিত্তি করে নিম্নোক্ত কয়েকভাগে ই-কমার্সকে ভাগ করা হয়-
ব্যবসা থেকে ব্যবসা(B2B): ই-কমার্সের এই অংশের অধীনে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
অর্থাৎ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাঝে যে লেনদেন আর ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যপারটি, তাকে B2B ই-কমার্স নামে অভিহিত করা হয়। সাধারনত এ ক্ষেত্রে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাইকারি কেনা বেচা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশের মত ই-কমার্সই B2B এর অন্তর্ভুক্ত।
- ব্যবসা থেকে গ্রাহক বা ভোক্তা(B2C):এ ক্ষেত্রে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত পণ্যগুলো সরাসরি গ্রাহক বা ভোক্তাদের নিকট পৌঁছে দেয়। অর্থাৎ আপনি অনলাইনে যখন কোন পন্য অর্ডার দিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন আপনার নিজের ব্যবহারের জন্য, তখন এই বাণিজ্য সিস্টেমটিকে B2C বা Business to Consumer ই-কমার্স বলা হয়। যেমনঃ www.wallmart.com
- ভোক্তা থেকে ব্যবসা(C2B): এবার বিষয়টিকে একটু উলটা দিক থেকে চিন্তা করুন। ধরুন, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবার আপনার কাছ থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে নিয়ে গেল। তখন সেই ই-কমার্স ব্যবসাকে বলা হবে Consumer to Business or C2B। যেমনঃ www.priceline.com ।
- ভোক্তা থেকে ভোক্তা(C2C):এই ক্ষেত্রে এবার ব্যবসা সম্পাদিত হয় শুধুমাত্র ভোক্তাদের নিজেদের মধ্যে। কোন ভোক্তার পন্য সরাসরি অন্য কোন ভোক্তা ক্রয় করে থাকলে তাকে Consumer to Consumer ই-কমার্স বলা হবে। একে অনলাইন নিলাম হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। যেমনঃ www.bikroy.com । এখানে একজন ক্রেতা অন্য কোন ক্রেতার কাছে পন্য ক্রয় করে থাকেন।
- ব্যবসা থেকে সরকার(B2G): এই ধরনের ই-কমার্স সাধারনত সম্পাদিত হয় কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় খাতের মধ্যে। মোটের উপর রাষ্ট্রীয় কেনা বেচা, লাইসেন্স সংক্রান্ত কার্যাবলি, কর প্রদান ইত্যাদি Business to Government ই-কমার্সের অধীনে সম্পাদন করা হয়।
- গ্রাহক থেকে সরকার(C2G):একে অনেকে আবার ই-গভর্নেন্স হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। যখন সরকার জনগনের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে কর বার ফী নিয়ে থাকেন তখন একে Consumer to Government ই-কমার্স বলা হয়। আর ডিজিটাল গভর্নেন্স এর আওতায় দিন দিন এ ধরনের সেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- মোবাইল কমার্স(M-commerce): মোবাইলের মাধ্যমে অর্থাৎ তারবিহীন কোন যন্ত্রের মাধ্যমে তথ্য এবং অর্থ আদান প্রদান এর বিষয়টিকে মোবাইল কমার্স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমানে এই ধরনের বানিজ্য দিন বদলের সাথে সাথে ভালোই জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
ই-কমার্স কেন শুরু করবেন?
একটু ভাবুন তো, আপনি যখন প্রচলিত প্রথায় কোন ব্যবসা শুরু করেন, তখন কয়জনের কাছে আপনার সেবা কিংবা পণ্য নিয়ে পৌছাতে পারবেন? নিশ্চয়ই, খুব বেশি হলে এক জেলা থেকে আরেক জেলা।
কিন্তু অন্যদিকে আপনি যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার পণ্যগুলো বেচতে পারেন, তবে সারা বিশ্বের সাথে আপনার যোগাযোগের এক মহা সুজোগ সৃষ্টি হবে। আর এই কারণেই মূলত অনেক মানুষ তাদের ব্যবসাকে আজকাল ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসছে।
এটি ছাড়াও আপনার ব্যবসা করার জন্য এখন আর বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার প্রয়োজন হয় না, যদি আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আপনার গ্রাহকের কাছে পৌছে যেতে পারেন।
ই-কমার্স শুরু করার জন্য আপনার কেবলমাত্র প্রয়োজন হবে একটি ল্যাপটপ কিংবা ইন্টারনেট সংযোগসম্পন্ন একটি ডিভাইস। বুঝতেই পারছেন, এক্ষেত্রে আপনার খরচ কিন্তু অনেক অনেক গুণে কমে যাবে।
আর যেকোন ব্যবসার মূল নীতিই কিন্তু কম খরচে বেশি লাভ করা। আশা করি, ব্যবসায়ী হিসেবে ই-কমার্স কেন শুরু করবেন, বিষয়টি আপনার কাছে এতক্ষণে সন্দেহাতীত হয়ে গেছে।
ই-কমার্স এর জন্য যা যা লাগে-
আচ্ছা সাধারণ একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনার কী কী প্রয়োজন হবে?? সর্বপ্রথম আপনাকে ঠিক করতে হবে কী-ধরনের পন্য নিয়ে আপনি ব্যবসা করতে চলেছেন। এরপর আপনাকে জানতে হবে কাদের কাছে আপনি এই পন্যগুলো বেচবেন।
অর্থাৎ আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা হতে চলেছে। আর সবশেষে বিজনেস খোলার জন্য লাগবে একটি প্লাটফর্ম বা যাকে আমরা দোকান বলে থাকি। আর ইন্টারনেট জগতে সেই প্লাটফর্মটি হতে পারে আপনার একটি ওয়েবসাইট।
এখন বাস্তবে আপনার যদি একটা দোকান থাকতো, তাহলে তো লোকজন সেখানে এসে অনায়াসেই আপনার পণ্যগুলো ক্রয় করে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ইন্টারনেটে তো আর সেটা সম্ভব হবে না।
তাই আপনাকে এটিও ঠিক করে নিতে হবে গ্রাহকের কাছে আপনি কীভাবে আপনার সেবাকৃত পণ্যগুলো ডেলিভারি দিবেন। আর সবচেয়ে মূল্যবান যে বিষয়টি তা হলো, আপনার পণ্য অন্যরা কেন কিনবে বা একজন গ্রাহক কীভাবে জানতে পারবে যে আপনি অমুক জিনিস বেচতে চান? এর জন্য আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা সহকারে আপনার পণ্যের জন্য ভালো ব্রান্ডিং আর মার্কেটিং এর প্রয়োজন হবে।
আর সময়ের সাথে সাথে আপনার ব্যবসার বৈধতার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। এই হলো মূলত ই-কমার্স শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি বিষয়াদি।
ই-কমার্স শুরুর খরচপাতি কেমন?
আপনি যেহেতু এতক্ষণ আমাদের সাথে আছেন, তাহলে ধরেই নিতে পারি ই-কমার্সের শুরুর দিকে কেমন খরচ আপনার হতে পারে, তার একটা আন্দাজ। আপনি ইতোমধ্যেই করে ফেলেছে। তবে ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে আর পরিসরেও এতে ভিন্নতা আসতে পারে। যেমনঃ ছোটোখাটো একটা ব্যবসা শুরু করতে আপনার শুধু একটা ওয়েবসাইট হলেই চলবে। আর সাথে লাগবে কিছু বিজ্ঞাপনমূলক বিষয়বস্তু।
এছাড়াও পণ্য তৈরি আর ডেলিভারির জন্য কিছু খরচ হতে পারে। আমি নির্দিষ্ট করে কোন একটা বাজেট আপাতত আপনাদের বলতে পারছি না। কারণ একেক ব্যবসার জন্য এর পরিমাণ ভিন্ন রকম হতে পারে। তবে প্রচলিত ব্যবসার তুলনায় এতে অনেক অনেক কম বিনিয়োগেই আপনি আপনার ব্যবসাটিকে ভালো একটি পজিসনে দাঁড় করিইয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের সুবিধা-অসুবিধা-
ই-কমার্স কী? কত প্রকার? আপনি কেন ই-কমার্স শুরু করবেন? এসব বিষয় তো জানা হলো। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্সের সুবিধা-অসুবিধা কিরকম হতে পারে, তা কী একবারও ভেবে দেখেছেন? পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় দেশগুলোতে বিশ শতকের শেষভাগে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হলেও বাংলাদেশের মত অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে তা ছড়িয়ে পড়তে আমাদের একুশ শতক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তবুও আমাদের দেশে এখনো অনেক দিক দিয়েই অনেক খামতি রয়েই গেছে। এত কিছুর পরও ২০০৯ সালের পর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২১ বিনির্মানের অভিলক্ষ্যে অনলাইন এর সুজোগ সুবিধা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ইতোমধ্যেই মানুষজন এই নতুন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসাও শুরু করছেন।
যাকে ই-কমার্স নামে আমরা চিনে থাকি। দিন দিন এই অনলাইন সাইটগুলোতে কেনাকাটার বিষয়টিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা খুব জরুরী যে, এখনো কিন্তু আমাদের প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলেই অনলাইনের এই সুবিধাটা সবাই পাচ্ছে না।
আর সুবিধা থাকলেও সঠিক গাইডলাইনের অভাবে অর্ধশিক্ষিত অনেক মানুষ বিষয়টিকে এখনো তেমন একটা বুঝে উঠতে পারে নি। সুতরাং অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে এই বিষয়টিও আপনার মাথায় রাখতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে আপনি কিন্তু বিষয়টিকে কাজে লাগাতে পারেন। যেহেতু এখনো তেমনভাবে ই-কমার্স বাংলাদেশে শুরু হয়নি , তাই আপনার প্রতিযোগিতাও অনেক কম হবে। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবসা শুরু করলে, খুব সহজেই আপনিও একজন সফল অনলাইন ব্যবসায়ী হতে পারবেন।
বাংলাদেশের ই-কমার্স নিয়ে যেহেতু কথা বলছিলাম, তাই আরেকটি বিষয় না তুললেই নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) রয়েছে। আর এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় দশ হাজারের মত উদ্যোক্তা রয়েছেন।
যারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের তাদের উতপাদিত ফসলগুলো সরাসরি ভোক্তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এতে করে কৃষকদের যেমন কষ্ট করে তাদের উতপাদিত পণ্যগুলো বাজারে নিয়ে যেতে হয় না, তেমনি তাদের লাভও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেননা, এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে কোন মধ্যসত্ত্বভোগী থাকে না। আপনাদের আরো সুবিদার্থে আমি এখানে বাংলাদেশেরে জনপ্রিয় বেশ কিছু ই-কমার্স সাইটের নাম উল্লেখ করছি, যেগুলো নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলেই আপনি বাংলাদেশের ই-কমার্স এর বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ কেমন হতে চলেছে, তার ভালো একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।
- রকমারি.কম
- ক্লিকবিডি
- বিক্রয়.কম
- এখনি.কম
- হটঅফারবিডি.কম
- প্রিয়শপ.কম
- উপহারবিডি
- ই-বে
- আমাজন
- ইজিটিকেট
- আইটিবাজার২৪
পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট আলিবাবা ডট কমের নাম তো নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। আর সেদিন কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের বাংলাদেশেরও যেকোন পণ্য এই ই-কমার্সের কল্যাণে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে থাকা একজন ক্রেতা ঘরে বসেই অর্ডার দিতে পারবেন।
আর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেই ক্রেতার ঠিকানায় পৌছে যাবে বাংলাদেশের পণ্য। কে জানে আপনার প্রতিষ্ঠানও হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের আলিবাবা কিংবা এমাজন ডট কম !
শূন্য থেকে একটি সফল ই-কমার্স ব্যবসা গড়ে তোলার সম্পূর্ণ গাইডলাইন
এতক্ষণ বকবক করার পর ধরলাম, আপনিও এখন অনলাইনে একটি ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন। তবে আর্টিকেলের এই অংশটুকু খানিকটা মন দিয়ে পড়ূন।
ই-কমার্স শুরু করার আগে যে বিষয়গুলো না জানলেই নয়
এবার আমি এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো একজন সফল উদ্দোক্তা হিসেবে আপনার ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে দখল করে নেয়া উচিত ।
মার্কেট রিসার্চঃ
কোন ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই বর্তমান মার্কেটের হালচাল নিয়ে কিছুটা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর উপর আপনি জোড় দিবেন তা হলো-
- বর্তমানে বাজারে মানুষ কোন পণ্যটি বেশি খুজছে।
- আর সেই পণ্যের জন্য মানুষ ই-কমার্স সাইট ব্যবহার করছে কি না।
- গ্রাহকরা কোন পদ্ধিতে আপানার পণ্যের ডেলিভারি নিতে বেশি পছন্দ করে।
- কোন পণ্যগুলো কতদিনের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হয়।
- অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কিরকম ডিসকাউন্ট বা অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে।
- আপনার মার্কেটে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দি কারা হতে চলেছে এবং তাদের মূলনীতিগুলো কি কি।
- প্রতিদ্বন্দি সাইটগুলো কোন কোন পণ্যগুলো অনলাইনে বিক্রি করছে।
আপানার প্রতিদ্বন্দি নিয়ে রিসার্চ করতে বললাম বলে এইটা আবার ভেবে বসবেন না যে তারা যাই করবে আপ্নাকেও তাই করতে হবে। ব্যবসাক্ষেত্রে একটু ইউনিক হবার চেষ্টা সবারই থাকে। তবে সকম ব্যবসার স্ট্রেটিজিগুলো কিন্তু অনেকটা একরকমই হয়ে থাকে। আশা করি , বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
কোন পণ্য নিয়ে আপনি ই-কমার্স শুরু করতে চলেছেন?
আপনি হয়তো ভাবছেন এটা তো আগে থেকেই ঠিক করা আছে, আমি কোন পণ্যগুলো নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছি। কিন্তু না। আপনি কোন পণ্য নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তার আগে কিন্তু মার্কেট রিসার্চ টা আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে করতে হবে।
শুধু মার্কেট নিয়ে ভাবলেই কিন্তু হবে না। এবার আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন পণ্যটি আপনি সহজেই আপনার ক্রেতার কাছে কম খরচে লাভজনক উপায়ে পৌছিয়ে দিতে পারবেন।
আর মনে রাখবেন, পরবর্তীতে ব্যবসার প্রসারের জন্য কিন্তু আপনাকে পণ্যের তালিকা বৃদ্ধিতে এক জাতীয় পণ্য যোগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর পণ্য সংগ্রহের উপায়গুলোও ভেবে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
পণ্যের ডেলিভারি আর মূল্য পরিশোধের মাধ্যম এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
ধরলাম আপনি ঠিকঠাক মতো পণ্য সিলেক্ট করে ফেলেছেন। এবং কিছু গ্রাহকও আপনি পেয়ে গেছেন। এবার আপনার পণ্যটি ভোক্তাদের কাছে কীভাবে পরিবহন করবেন, তা ঠিক করুন। দূর দূরান্তে পণ্য পরিবহনের জন্য আপনি সুন্দরবন কুরিয়ার কিংবা এস এ পরিবহনের মত কিছু ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন।
আর এক্ষেত্রে সঠিক ট্রাফিক সিস্টেম আপনার জেনে রাখা আবশ্যক। সর্বশেষে আপনাকে পেমেন্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ই-কমার্সে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কাস্টমারদের সুবিদার্থে আপনাকে অফ লাইন এবং অনলাইন উভয় পেমেন্ট সিস্টেমই রাখতে হবে।
অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি SSL Gateway ব্যবহার করতে পারেন। আর কাস্টমার ভেদে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী মুল্য পরিশোধের জন্য মাধ্যমের ভিন্নতা তো রাখতেই হবে।
সঠিক টারগেট কাস্টমার নির্ধারণ করা
আপনি যদি মনে করেন, ব্যবসার পরিসর যত বড় হবে ততই আপনার জন্য সুবিধার। তবে আপনার ধারণা ভুল। আপনার পণ্যের মাধ্যমে কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে চলেছে , তাদেরকেই আপনার টারগেট অডিয়েন্স হিসেবে রাখুন। এর জন্য আপনার ব্যবসার পরিসর স্বল্প হলেও কোন সমস্যা নেই।
পরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং করা
বাজারে বিদ্যমান হাজারো পণ্যের মাঝে লোকজন আপানার প্রোডাক্টটিই কেন কিনবে? আপনার প্রতিদ্বন্দিদের মাঝে নিজেকে একক একটি সত্ত্বা ও স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে শিখুন।
তাই পণ্যের জন্য সঠিকভাবে ব্র্যান্ডিং করুন। আচ্ছা, বুঝলাম আপনার পণ্যটিই বাজারে সেরা পণ্য। কিন্তু সবাই জানবে কীভাবে যে আপনি অমুক পণ্যের সেরা বিক্রেতা? এর জন্য যত পারেন ভালো মানের পরিকল্পনা নিয়ে সঠিকভাবে আপনার পণ্যের মার্কেটিং করুন।
আর সম্ভাব্য সকল মাধ্যমেই – সোসাল মিডিয়া, বিভিন্ন অয়েবসাইটের পেইড এড, সংবাদপ্ত্র বিজ্ঞাপন, পোস্টার, লিফলেট, বিলবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
আমরা আমাদের আর্টিকেলের একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। তবে শেষ করার আগে একটি কথা আপনাদের না বললেই নয়, আত্মবিশ্বাস আর পরিকল্পনা ছাড়া কিন্তু কোন কাজেই সফলতা আসে না।
আর হাজারো উদ্দোক্তা কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই আজ তাদের ব্যবসাকে ভালো কোন পর্যায়ে দাঁড় করাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনার জন্য অবশ্যই আমাদের শুভকামনা রইলো। ধন্যবাদ পুরো সময়টি আমাদের সাথে থাকার জন্য।