জাল দলিল বাতিলের মামলা : যে কোন মানুষ যার বিরুদ্ধে লিখিত কোন দলিল বাতিল কিংবা বাতিল যোগ্য হয়। এবং তার যদি কোন যক্তি সঙ্গত আশংকা থাকে। যদি এই ধরণের দলিল অনিষ্পন্ন রাখা হয় তাহলে, তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে, এই ব্যক্তি যথা যথ এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্ট এ দলিল বাতিল মামলা করতে পারবে। আর এই মামলা গুলোকে দলিল বাতিল এর মামলা বলা হয়।
মনে করুন- একজন ব্যক্তি কে একটি জমি প্রদান করেছেন। পরবর্তী সময়ে সেই ব্যক্তি উক্ত জমি টি আবার অন্য কাউকে উইল করে, মৃত্যু বরণ করেন।
তারপরে, সেই উইল প্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পতির দখল নিয়ে নেয়। তো এই মর্মে, একটি জাল দলিল পেশ করেন। উক্ত জমি টিতার জন্য ট্রাস্টী হিসেবে, একজন সম্পাদন করে দিয়েছে উইল এর মাধ্যমে।
সেক্ষেত্রে প্রথম যে ব্যক্তিকে জমিটি প্রদান করা হয়েছি। সেই ব্যক্তি চাইলে উক্ত জাল দলিল বাতিল করে নিতে পারবেন। আর দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।
তো বন্ধুরা, আপনারা যারা জমির জাল দলিল বাতিলের মামলা করতে চান? তারা আমাদের দেওয়া আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
কারণ আমরা এখানে জাল দলিল বাতিলের মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তো চলুন আর দেরি না করে, বিস্তারিত আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক।
জল দলিল বাতিলের মামলা করার শর্ত গুলো
আপনি যদি জাল দলি বাতিলের মামলা করতে চান? তাহলে কিছু শর্ত অনুসরণ করে কাজ করতে হবে।
তো কি কি শর্ত আপনাকে মান্য করে কাজ করতে হবে। সেই বিষয় গুলো জানতে নিচে দেওয়া তথ্য গুলো মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
১। কোন ব্যক্তি ‘র বিরুদ্ধে একটি লিখিত দলিল বাতিলের যোগ্য হতে হবে।
২। জাল দলিল দাতার নিকট দলিল এর অস্তিত্ব ক্ষতির কালণ হবে বলে, যক্তি সঙ্গত আশংকাই থাকতে হবে।
৩। জাল দলিল এর অস্তিত্ব দলিল দাতার গুরুতর ক্ষতি ‘র কারণ হতে পারে।
৪। তামাদি আইন অনুসারে নির্দিষ্ট সময় এর মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
৫। কোর্ট ফি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে মামলা দায়ের করতে হবে।
তো আপনারা উক্ত শর্ত গুলো পূর্ণ করতে পারলে, জাল দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।
তামাদি আইনের মেয়াদ
তামাদি আইন এর 91 ধারা মোতাবেক, নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর 39 ধারায় জাল দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবে। উক্ত বিষয় এ অবগতি হওয়ার তিন বছর এর মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
কিন্তু বিশেষ তামাদি আইন এর 120 অনুচ্ছে, মোতাবেক ছয় বছর এর মধ্যে মামলা দায়ের করা যাবে।
কোর্ট ফি
নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর 39 ধারা মোতাবেক শুধু মাত্র কোন দলিল বাতিল যোগ্য ঘোষণা ‘র মামলয় কোর্ট ফি আইন 1870 এর ২য় তফসিল এর 12(3) অনুচ্ছেদ মোতাবেক নির্দিষ্ট কোর্ট ফি 300/- টাকা প্রদান করতে হবে।
কিন্তু জাল দলিল বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে যদি দলিল অর্পণ ও দলিল বাতিল এর আবেদন করা হয়। তাহলে প্রথম অংশ এর জন্য কোর্ট ফি আইন এর 7(4)-(গ) ধারা মোতাবেক যে, পরিমাণ দামের উপর বাদী প্রতিকার চাই।
সেটি ব্যক্ত করে, তার উপর কোর্ট ফি আইন এর ১ম তফসিল (বি)- এ প্রদত্ত ছক অনুযায়ী ২% হারে ফি পরিশোধ করতে হবে।
জাল দলিল বাতিলের মামলা করার যোগ্যতা
দলিল বাতিল বা বাতিল যোগ্য দলিল এর কোন পক্ষ নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর 39 ধারা মোতাবেক, জাল দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করতে পারবেন।
জাল দলিলের পক্ষ ’রা ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দরিল টি বাতিল কিংবা বাতিল যোগ্য তারা মামলা দায়ের করার সুযোগ পাবেন।
নাবালক ব্যক্তি’রা মামলা করতে পারে কিনা ?
নাবালকদের কোন জমির দরি সম্পাদিত হলে, উক্ত দলিল তার বিরুদ্ধে বাতিল কিংবা বাতিল যোগ্য হলে।
সেই দলিল এর অস্তিত্ব নাবালক এর গুরুতর ক্ষতির কারণ হলে। নাবালক নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর 39 ধারা মোতাবেক জাল দলিল বাতিলের মামলা করতে পারবেন।
বাতিল যোগ্য কতিপয় দলিল
নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন 1877 এর 39 ধারা ও শর্ত মোতাবেক যে, কোন দলিল বাতিল ঘোষণা হতে পারে। আপনার সুবিধার জন্য এমন কিছু বাতিল যোগ্য দলিল উল্লেখ করা হলো। যেমন-
- বিক্রয় দলিল কিংবা সাফ কবলা দলিল।
- দানপত্র দলিল কিংবা হেবা দলিল।
- রেহেনী দলিল কিংবা বন্ধকী দলিল।
- ইচ্ছা পত্র দলিল কিংবা উইল দলিল।
- ইজারা দলিল বা লিজ দলিল।
দলিল আংশিক বাতিল এবং আংশিক বহাল রাখা যাবে কিনা ?
নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন 1877 এর 40 ধারা মোতাবেক, একটি দলিল বিভিন্ন অধিকার এবং বিভিন্ন বাধ্য বাধকতা ‘র সাক্ষ্য হয়।
এই ক্ষেত্রে, আদালত যথাযথ মামলায় সেটি আংশিক ভাবে বিলোপ করতে পারবে। আবার অবশিষ্ট অংশ গুলো বহাল রাখতে পারবেন।
ক্ষতি পূরণ এর নির্দেশ
নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর 41 ধারা তে বলা হয়েছে যে, জাল দলিল বাতিলের রায় প্রদান এর সময়, আদালত যে, পক্ষ কে এরুপ প্রতিকার মঞ্জুর করবে।
সেই পক্ষ এর তরফ থেকে অপর পক্ষ কে, ন্যায় বিচার এর প্রয়োজনে ক্ষতি পূরণ প্রদান এর নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।
জাল দিলল বাতিলের মামলা প্রমাণ এর দায়িত্ব
জাল দলিল বাতিলের মামলা যে ব্যীক্ত দাবি করবে। দলিল টি তার বিরুদ্ধে বাতিল কিংবা বাতিল যোগ্য ও দলিল এর এরুপ অস্তিত্ব এই ব্যক্তির গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পরে। এই ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির উপর উক্ত অভিযোগ প্রমাণ এর দায়িত্ব বর্তাবে।
আদালত এর ক্ষমতা
নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর যে কোন প্রতিকার আদালত এর ডিসক্রিশনারি পাওয়া বা ইচ্ছা ধীন ক্ষমতা অন্তুর্ভুক্ত। কোন জাল দলিল বাতিল বা বাতিল যোগ্য ঘোষণা করা। দলিল অর্পন কিংবা দলিল বাতিল এর আদেশ প্রদান করা আদালত এর ইচ্ছা ধীন ক্ষমতা।
কিন্তু উক্ত ইচ্ছা ধীন ক্ষমতা কোন ভাবে স্বেচ্ছাচারিতা বলে গণ্য হবে না। এই ধরণের ক্ষমতা অবশ্যই সুষম। যুক্তি যুক্ততার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বিচারিক মূল নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে।
শেষ কথাঃ
আপনারা যারা জাল দলিল বাতিলের মামলা করতে চান? তারা উপরিউক্ত আইনি শর্তাবলি অনুসরণ করে, কাজ করতে পারেন। তাহলে আশা করা যায় খুব সহজেই আপনার দলিল পূর্ণরায় ফিরে পাবেন।
আর এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন কিছু জানার থাকে। তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর জমি/ দলিল সংক্রান্ত কোন আপডেট তথ্য পেতে, আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।