আউটসোর্সিং কি : আউটসোর্সিং হলো একটি ব্যবসায়িক পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি সংস্থা নিজের কাজ সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা প্রক্রিয়াকে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে সম্পাদন করতে বা একটি ব্যক্তি কাছে কাজ করিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে খরচ কমাতে পারে।
এটি বিশেষত প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং, লেখালেখি, ডাটা প্রসেসিং, কল সেন্টার পরিচালনা এবং মার্কেটিং ইত্যাদি ধরনের কাজের জন্য প্রযোজ্য।

একটি সংস্থা যখন আউটসোর্সিং পদ্ধতিটি ব্যবহার করে, সে নিজের অংশগ্রহণকারী বিভাগ কে একটি বাহ্যিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
সাধারণত অন্য দেশের একটি কোম্পানি একটি আউটসোর্সিং সেন্টার হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে তারা বিভিন্ন কাজ সম্পাদন ক,রে এবং আর্থিক উপার্জন করতে পারেন।
আউটসোর্সিং করে, সংস্থাআউটসোর্সিং এর মাধ্যমে একটি অন্য দেশে অবস্থিত কোম্পানি বা সেন্টারে কাজ দিয়ে সময় এবং খরচ সংকট কমিয়ে তুলতে পারে।
আউটসোর্সিং এর সাধারণ উদাহরণ গুলো হলো- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন এবং প্রোগ্রামিং, ডাটা এন্ট্রি এবং প্রসেসিং, মার্কেটিং এবং সেলস, আর্ট এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন, কল সেন্টার পরিচালনা, লেখালেখি ইত্যাদি।
এছাড়াও, মেডিকেল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ (Medical transcription), হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, লগিস্টিক্স, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি অন্যান্য কাজ গুলো আউটসোর্সিং হিসেবে করা হয়।
একটি সংস্থা যখন আউটসোর্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করে, সে নিজের অংশগ্রহণকারী বিভাগকে একটি বিদেশী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
আউটসোর্সিংয়ে কি কি কাজ করা যায়
আউটসোর্সিং-এ বিভিন্ন কাজ করা যায়। তার কিছু উদাহরণ হলো :
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট:
এই প্রক্রিয়ায় কোডিং, ডেভেলপমেন্ট, টেস্টিং, এবং ডকুমেন্টেশন যেমন- ওয়েব এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ডেটাবেস ডেভেলপমন্টে, কাস্টম সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি করা হয়।
মার্কেটিং:
মার্কেটিং পরিচালনায়- ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, এসইও (SEO), ইমেল মার্কেটিং, কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।
আর্টিকেল রাইটিং / লেখালেখি:
ব্লগ লেখা, আর্টিকেল লেখা, কনটেন্ট রাইটিং, এসইও ফ্রেন্ডলী পোস্ট তৈরি, প্রেস রিলিজ লেখা, কপি এডিটিং ইত্যাদি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করা হয়।
গ্রাফিক্স ডিজাইন:
লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং এবং প্রোমোশনাল মাটেরিয়াল ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, প্রযুক্তিগত গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্যাকেজ ডিজাইন ইত্যাদি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করা যায়।
ডাটা এন্ট্রি এবং প্রসেসিং:
বাংলা / ইংরেজি ডাটা এন্ট্রি, ডাটা কনভার্ট করা, ডাটা ফরম্যাটিং এবং প্রসেসিং, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, স্প্রেডশিট ইত্যাদি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করা হয়।
কল সেন্টার পরিচালনা:
ইনবাউন্ড কল সেন্টার, আউটবাউন্ড কল সেন্টার, কাস্টমার সাপোর্ট, টেলি মার্কেটিং, কল রেসপন্স, কল সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি আউটসোর্সিং করা হয়।
উল্লেখিত কাজ গুলো শুধুমাত্র আউটসুর্সিং এর কয়েকটি উদাহরণ, এছাড়াও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে, বিভিন্ন অন্যান্য কাজ প্রসেসিং করা যায়।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স, বই প্রকাশনা, লোগো সেবা, ফাইন্যান্সিয়াল সেবা, লগিস্টিক্স এবং ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং এবং ফাইন্যান্স, ইন্সপেকশন এবং টেস্টিং, বিজ্ঞাপন এবং মার্কেটিং, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।
আউটসোর্সিং করা যায় বিভিন্ন ধরনের কাজ, আপনার কোম্পানির প্রয়োজনে উপযুক্ত কাজ গুলো আউটসোর্স করতে পারেন।
আউটসোর্সিং এর সুবিধা গুলো কি কি?
আউটসোর্সিং করার সাথে সাথে এর সকল ক্লায়েন্টের জন্য একাধিক সুবিধা রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা গুলোর নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
খরচের পরিমাণ কম:
আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গুলোর খরচের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। আউটসোর্সিং করার জন্য বাহ্যিক কোম্পানি গুলোর সাথে চুক্তি করে নিলে, সেটি খরচ এবং প্রশিক্ষণ ব্যয়ের উপর কম পরিমাণে খরচে সকল কাজ সম্পাদন করতে পারেন।
এছাড়াও, আউটসোর্সিং করার ফলে, কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবসায়িক ব্যয় বা সরকারী ট্যাক্স সংক্রান্ত ব্যয় কমে যায়।
কার্যক্ষমতা ও সময়সূচী:
আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের সংখ্যা বা কার্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে নিতে পারে এবং প্রয়োজনে কাজ গুলো অতিরিক্ত সময়ে শেষ করতে পারেন।
আউটসোর্সিং করার জন্য আপনি কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়ার জন্য নিয়োগ দিতে হয় না, এটি অন্য সংস্থার উদ্যোগে কাজ সম্পাদন করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সময় এবং সম্পদ ব্যয় সংক্রান্ত ত্রুটি কমানোর জন্য আপনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
দক্ষতা এবং নিপুণতা:
একটি বিশেষজ্ঞ বা বাহ্যিক সংস্থার সাথে চুক্তি করে, আউটসোর্সিং করার ফলে, আপনি দক্ষতা, নিপুণতা এবং অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ কর্মচারীদের নিয়োগ করার প্রয়োজন নেই, কারণ সেই কাজ গুলো অন্য সংস্থা বা ফ্রিল্যান্সার’রা করছে।
জনসাধারণের প্রতি কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস:
আউটসোর্সিং করার জন্য বিভিন্ন কাজের জন্য নিজেদের কর্মী নিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। এটি ব্যবসায়ের সাধারণ কাজ গুলো উৎসাহিত করে এবং নিজের প্রতিষ্ঠান জন্য কর্মীদের নিয়োগের জন্য জনসাধারণের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে, ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ করা হয়।
সময় ও তথ্য সংরক্ষণ:
আউটসোর্সিং করার ফলে, আপনি আপনার ব্যবসায়িক সময় এবং সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারেন। অন্য সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কাজ দেয়ার মাধ্যমে, আপনি কাজের চাপ কমাতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সময় ও সম্পদ ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে।
এ গুলো হলো কয়েকটি প্রধান সুবিধা, যা আউটসোর্সিং করার ফলে, প্রতিষ্ঠান গুলো উপভোগ করতে পারে। সেই সাথে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর কাজ গুলো করে নিতে পারেন।
আউটসোর্সিং এর অসুবিধা গুলো কি কি?
আউটসোর্সিং এর কিছু অসুবিধা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
মান নিয়ন্ত্রণ কম্প্রমাইজ:
আউটসোর্সিং করার ফলে, কাজের মান নিয়ন্ত্রণ অসম্পূর্ণ হতে পারে। অন্য সংস্থা বা ফ্রিল্যান্সার আপনার প্রতিষ্ঠানের মান স্ট্যান্ডার্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় গাইডলাইন পূরণ করতে নাও পারে।
গোপনীয়তা সমস্যা:
কিছু ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য গুলো সংস্থা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে আউটসোর্স করলে, গোপনীয়তার সমস্যা থাকতে পারে। তথ্যের অনিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং আইনগত ও নৈতিক সমস্যা হতে পারে।
যোগাযোগের সমস্যা:
আউটসোর্সিং করার ফলে, যোগাযোগের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভাষা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে ভুল ভাষা, সমস্যার জন্য কমিউনিকেশনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিয়মিত নিরাপত্তা বা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অভাব:
আউটসোর্সিং করার ফলে, প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়মিত ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে। ফ্রিল্যান্সাদের নিয়মিত মনিটরিং করা এবং নিরাপত্তা পরিবর্তন করা অসম্ভব হতে পারে।
উল্লেখিত অসুবিধা গুলো আউটসোর্সিং করার ফলে, সমস্যা গুলো লক্ষ্য করা হয়েছে। তবে, এই সমস্যা হতে পারে এবং এর সমাধান জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং পরিচালনা প্রয়োজন।
প্রতিষ্ঠান গুলো এই সমস্যার সাথে পরিচিত হওয়া এবং সঠিক বিকল্প গুলো ব্যবহার করে সমস্যা কাটাতে পারেন।
শেষ কথাঃ
আউটসোর্সিং একটি কার্যপ্রণালী যা প্রতিষ্ঠান গুলোকে কাজে সহজতর ও দ্রুততর করে তোলে এবং খরচ কমিয়ে তোলে।
তবে, আউটসোর্সিং করার সময় গোপনীয়তা, কমিউনিকেশন এবং নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যত্ন নেওয়া উচিত।
সঠিক ভাবে পরিচালিত হলে, আউটসোর্সিং ব্যবসায়ের সাথে উন্নয়নে সুযোগ ও সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। আপনি সম্পূর্ণ সঠিক বিবেচনা করে, আউটসোর্সিং ব্যবহার করলে, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
ধন্যবাদ।